‘নিজ স্কুলে আশ্রয় নিতে হবে তা কখনও কল্পনাও করিনি’
‘আমরা যে স্কুলে পড়ালেখা করেছি সেখানেই আশ্রয় নিতে হবে তা কখনো কল্পনাও করিনি। এখানে মানুষ অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। চারদিকে থই থই পানি। নৌকা ছাড়া চলাচল করা যায় না। পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটসহ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।’
এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জয়কৃষ্ণপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া স্কুলটির সাবেক শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস।
বিজ্ঞাপন
চলমান বন্যা পরিস্থিতি নোয়াখালীতে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। জেলার হাতিয়া উপজেলা ছাড়া বাকি আট উপজেলা ও সাতটি পৌরসভার প্রায় দেড় হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন ৩ লাখেরও বেশি মানুষ। বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এসব প্রতিষ্ঠানে পাঠদান শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
জেলা প্রশাসকের তথ্য মতে, জেলার আশ্রয়কেন্দ্রগুলো থেকে প্রায় ২ লাখ মানুষ বাড়ি ফিরে গেছেন। এখনো ৯০১টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ১ লাখ ৬৮ হাজার মানুষ আছেন। বন্যাকবলিত নিচু এলাকায় এখনো পানিবন্দি ১৬ লাখ ৪ হাজার ৩০০ জন। বন্যায় মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। বন্যাকবলিতদের সহায়তায় ৩০ লাখ নগদ টাকা ও ৮১ টন চাল মজুত আছে। তবে শুকনো খাবার, শিশুখাদ্য ও গোখাদ্যের কোনো মজুত নেই।
জয়কৃষ্ণপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আরেক সাবেক শিক্ষার্থী ইয়াছমিন আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। পড়ালেখা বর্তমানে স্থগিত আছে। মানুষ ঠিকমতো খাবার পাচ্ছেন না, সুপেয় পানি পাচ্ছেন না। পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বেঁচে থাকলে পড়ালেখা হবে। বাড়িঘরে গেলে বোঝা যাবে কখন স্কুলে যাবো।
ইয়াছমিন আক্তারের বাবা আব্দুল কাদের বলেন, আমাদের বাড়িঘরে পানি। তাই আশ্রয়কেন্দ্র থাকছি। এখানে পড়ালেখা করার মতো পরিবেশ নেই। আমার মেয়ে কলেজে পড়ে। তার বই খাতা সব ভিজে গেছে। পেটে খাবার নাই, পড়ালেখা করবে কীভাবে।
জেলা শিক্ষা অফিসার নুর উদ্দিন মো. জাহাঙ্গীর বলেন, এমন ভয়াবহ বন্যা নোয়াখালীর মানুষ দেখেননি। নিজেদের বাড়িঘর ডুবে যাওয়ায় তারা নিকটস্থ স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন। যতদিন তারা অবস্থান করবেন, ততদিন স্কুলে পাঠদান বন্ধ থাকবে। স্কুলগুলো ঠিক হতে সময় লাগবে। পাঠদান উপযোগী হলেই শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, একমাত্র হাতিয়া উপজেলা ছাড়া বাকি আটটি উপজেলা ও সাতটি পৌরসভার প্রায় দেড় হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন ৩ লাখেরও বেশি মানুষ। পানি কমে যাওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো থেকে প্রায় ২ লাখ মানুষ বাড়ি ফিরে গেছেন। এখনো ৯০১টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ১ লাখ ৬৩ হাজার মানুষ আছেন। বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এসব প্রতিষ্ঠানে পাঠদান শুরু হবে।
হাসিব আল আমিন/এফআরএস