কুমিল্লার দেবিদ্বারে মো. সেলিম নামের এক প্রধান শিক্ষক পদত্যাগ করেছেন। সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিগার সুলতানা।

পদত্যাগ করা মো. সেলিম দেবিদ্বার উপজেলার বাঙ্গুরি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তিনি দেবিদ্বার উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি।

বাঙ্গুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক ঢাকা পোস্টকে বলেন, মো. সেলিম বাঙ্গুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক থেকে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ২০১১ সালে প্রধান শিক্ষক হন। প্রধান শিক্ষক হওয়ার পর থেকেই অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিনি।

স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্যের রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের ঘনিষ্ঠ লোক হয়ে বাঙ্গুরী উচ্চ বিদ্যালয়ে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়েছিলেন তিনি। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে প্রায়ই বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকতেন। সপ্তাহে দুয়েকদিন এসে হাজিরা খাতায় সকল দিনের হাজিরা লিখে দিতেন। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতেন। স্কুল ফান্ডের টাকা ভোগ করেছেন ইচ্ছে মতো। শিক্ষকদের পদোন্নতির নামে দিতেন ঘুষ। নারী কেলেঙ্কারির সঙ্গেও সেলিম জড়িত ছিলেন।

এছাড়া দুর্নীতিবাজ এই সাবেক প্রধান শিক্ষক স্কুলের ফান্ডের হিসাব-নিকাশ তার নিজের কাছে রাখতেন। নামে-বেনামে বিভিন্ন কাজের কথা বলে বহু অর্থ আত্মসাৎ করেছেন তিনি। সহকারী শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধির সুপারিশ করার জন্য শিক্ষকদের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিলেও তাদের কাজ দেননি। ভয়ে কোনো শিক্ষক মুখ খুলতেন না ভয়ংকর এই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

বিগত ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের তোপের মুখে পড়েন প্রধান শিক্ষক মো. সেলিম দেবিদ্বার। পরে তার পদত্যাগ চেয়ে টানা কয়েকদিন আন্দোলন করে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ওই ঘটনার পর থেকে ৩-৪ মাস টানা বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছিলেন তিনি।

শিক্ষার্থীরা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো তদন্ত কিংবা ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়াই রাজনৈতিক প্রতিপত্তি খাটিয়ে ফের বিদ্যালয়ে আসা শুরু করেন সেলিম।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা পালানোর পর থেকে বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়ে আত্মগোপনে চলে যান তিনি। পরে সোমবার দুপুরে দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে এসে প্রধান শিক্ষক পদ থেকে পদত্যাগের পত্র জমা দেন।

দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিগার সুলতানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিধি অনুযায়ী তার পদত্যাগ পত্রটি গ্রহণ করা হয়েছে। পরবর্তী ব্যবস্থা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নেবেন।

আরিফ আজগর/আরকে