‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ঢাকার আশুলিয়ায় আন্দোলকারীদের গুলি করে হত্যার পর মরদেহ ভ্যানে স্তূপাকারে রাখছে পুলিশ।’—এমন একটি ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় সমালোচনা। এবার সেই ভিডিওটিতে থাকা আরও দুই পুলিশ সদস্যের পরিচয় মিলেছে।

ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে দেখা যায়, একটি ভ্যানের মধ্যে কয়েকটি মরদেহের স্তূপ। ভ্যানের নিচে পড়ে আছে একটি মরদেহ। হেলমেট ও ভেস্ট পরা এক পুলিশ সদস্যসহ আরও একজন সেই মরদেহটি উঁচিয়ে ভ্যানে রাখছেন। পরে একটি ময়লা চাদর ও রাস্তার ব্যানার দিয়ে ভ্যানে থাকা মরদেহগুলো ঢেকে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু তার পরেও ঝুলেছিল মরদেহগুলোর হাত-পা। তার পাশ দিয়ে চিন্তিত মুখে পায়চারি করছেন পুলিশের দুই সদস্য। এমন বীভৎস ও লোমহর্ষক ভিডিও দেখে অনেকেই সেই পুলিশ সদস্যদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন।

পরিচয় শনাক্ত হওয়া দুই পুলিশ সদস্যরা হলেন, আশুলিয়া থানার উপসহকারী পরিদর্শক (এএসআই) বিশ্বজিৎ রায় ও কনস্টেবল মুকুল।

মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় আশুলিয়া থানার উপসহকারী পরিদর্শক (এএসআই) বিশ্বজিৎ রায় ও কনস্টেবল মুকুলের পরিচয় নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় লোকজন। এ ছাড়া পুলিশের একটি সূত্রও তাদের পরিচয় নিশ্চিত করেছে।

ভাইরাল ওই ভিডিওতে একাধিক পুলিশ সদস্যকে দেখা গেলেও চারজন পুলিশ সদস্যকে স্পষ্ট দেখা যায়। তারা হলেন-ঢাকা উত্তরের গোয়েন্দা পুলিশের (তদন্ত) কর্মকর্তা আরাফাত হোসেন, কনস্টেবল রেজাউল করিম ও  আশুলিয়া থানার  উপসহকারী পরিদর্শক (এএসআই) বিশ্বজিৎ রায় ও কনস্টেবল মুকুল।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, ভিডিওতে ভ্যানের পাশ দিয়ে হেঁটে হেলমেট হাতে ও পুলিশের ভেস্ট পড়া ছিলেন গোয়েন্দা পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা আরাফাত হোসেন। আরাফাতের পাশেই গারো সবুজ রঙের একটি গেঞ্জি পড়ে ছিলেন ডিবির কনস্টেবল রেজাউল। এ সময় ওই ভিডিওতে থাকা আরও দুইজনের মধ্যে একজনকে দেখা যায় লাল হেলমেট হাতে পুলিশের ভেস্ট পড়া আশুলিয়া থানার সহকারী উপপরিদর্শক বিশ্বজিৎ রায় এবং মাথায় হেলমেট ও পুলিশের ভেস্ট পড়া কনস্টেবল মুকুলকে।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে আশুলিয়া থানা পুলিশের এক উপপরিদর্শক ওই দুই পুলিশ সদস্যের পরিচয় নিশ্চিত করেন।

তবে এ ঘটনায় ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আহম্মদ মুঈদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা ঘটনাটি দেখেছি। চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান পুলিশের ওই কর্মকর্তা।

উল্লেখ্য, গত ৩০ আগস্ট মরদেহ স্তূপাকারে জমা করা এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে দেখা যায়, দুজন পুলিশ সদস্যের একজন হাত ও একজন পা ধরে মরদেহ ভ্যানে নিক্ষেপ করছেন। এর আগেই ভ্যানে মরদেহ স্তূপ করে কাপড় দিয়ে ঢেকে দেন তারা। সর্বশেষ মরদেহটি তুলে একটি ব্যানার দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। শেষে পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি দেখা মেলে। ভিডিওর ১ মিনিট ৬ সেকেন্ডে একটি পোস্টার দেখা যায়, যা স্থানীয় ধামসোনা ইউনিয়ন সভাপতি প্রার্থী ও ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী আবুল হোসেনের। সেই পোস্টারটি দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে, ভিডিওটির ঘটনাস্থল আশুলিয়া থানার পাশে।

লোটন আচার্য্য/এএমকে