সাবেক মন্ত্রী তাজুলের নির্বাচনী এলাকার জনপ্রতিনিধিরা পলাতক
ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশত্যাগে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। গত ৫ আগস্ট তিনি ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর ভেঙে পড়েছে সাবেক স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলামের বিনা ভোটের সাম্রাজ্য। তিনি পালানোর পর তার নির্বাচনী এলাকা কুমিল্লা-৯ আসনের (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) সকল জনপ্রতিনিধি পলাতক রয়েছেন।
এসব জনপ্রতিনিধি এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে দুই উপজেলার লাখ লাখ মানুষ। জরুরি নাগরিক সেবা, জন্মনিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স, মৃত্যুসনদসহ সব কিছুতে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন ওই দুই উপজেলার নাগরিকরা।
বিজ্ঞাপন
সরকারের পতনের পর সকল সিটি করপোরেশন মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান পৌর মেয়রদের অপসারণ করে উপজেলা পরিষদের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) এবং পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে। তবে যেসব ইউপি চেয়ারম্যান পলাতক রয়েছেন তাদের অফিসে একজন করে প্রশাসক নিয়োগের কার্যক্রম চলছে বলে জানা গেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে।
লাকসাম উপজেলা পরিষদ ও একটি পৌরসভাসহ মোট ৮টি ইউনিয়ন রয়েছে। লাকসাম উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইউনূছ ভূঁঞা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং তাজুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ সহচর। উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মহব্বত আলী ছিলেন তাজুল ইসলামের শ্যালক। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পড়শি সাহা,পৌরসভার মেয়র আবুল খায়ের। তাদেরকে অপসারণ করা হলেও এখনও স্বপদে বহাল আছেন লাকসাম পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের ৯ জন পুরুষ কাউন্সিলর এবং ৩ জন নারী কাউন্সিলরসহ লাকসামের ৮টি ইউনিয়নের ৮ জন ইউপি চেয়ারম্যান, ৭২ জন ইউপি সদস্য এবং ২৪ জন সংরক্ষিত নারী সদস্য। সরকার পতনের সঙ্গে সঙ্গে এরা সবাই গা ঢাকা দিয়েছেন।
মনোহরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল মান্নান চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান তাজুলের আপন ভাতিজা আমিরুল ইসলাম এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শিরিন আক্তার মুক্তা সাবেক মন্ত্রী তাজুলের হস্তক্ষেপে বিতর্কিত নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন। যদিও তাদেরকে অপসারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। সরকার পতনের পর তারা সবাই এলাকা ত্যাগ করেছেন।
এ ছাড়া মনোহরগঞ্জের ১১টি ইউনিয়নের ১১ জন চেয়ারম্যান, ৯৯ জন ইউপি সদস্য এবং ৩৩ জন নারী সদস্যসহ ১৪৩ জন জনপ্রতিনিধির সবাই ই এলাকা ছাড়া।
দুই উপজেলায় মোট ক্ষমতায় থাকা ২৪০ জনসহ অপসারিত দুই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ভাইস চেয়ারম্যান ও লাকসাম পৌর মেয়র মিলিয়ে ৭ জনসহ মোট ২৪৭ জন জনপ্রতিনিধি পলাতক রয়েছেন।
লাকসাম উপজেলার আজগরা ইউনিয়নের বাসিন্দা অলি উল্ল্যাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছেলের জন্মনিবন্ধন সনদের জন্য আবেদন করেছিলাম। কয়েকদিন অফিসে ঘুরে এসেছি। সচিব বলেছেন, চেয়ারম্যান না থাকায় এখন কার্যক্রম বন্ধ আছে।
মনোহরগঞ্জ উপজেলার লক্ষণপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুল্লাহ আল বাকী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য একটা প্রত্যয়নপত্র ও নাগরিক সনদের জন্য অনেকদিন ধরে ঘুরছি। চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর ছাড়া সেগুলো দিচ্ছে না ইউনিয়ন পরিষদ থেকে। আমরা খুব দুর্ভোগে আছি।
গোবিন্দপুর ইউনিয়নের সচিব শফিউল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, চেয়ারম্যান কার্যালয়ে না আসায় আমরা চাইলেও নাগরিকদের সেবা দিতে পারছি না।
এলাকা ত্যাগ এসব জনপ্রতিনিধিদের সবার মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়ায় কারও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
লাকসাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল হাই সিদ্দিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, জনপ্রতিনিধিদের গা ঢাকা দেওয়ার সমস্যাটি মন্ত্রণালয় অবগত আছে। মন্ত্রণালয় থেকে সব ধরনের নাগরিক সেবা বেগবান করতে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আমরা সে অনুযায়ী কাজ করছি।
মনোহরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজালা রানী চাকমা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষেত্রে আমাদেরকে মন্ত্রণালয় থেকে জন্ম ও মৃত্যু সনদের বিষয়ে দুটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমি আমার উপজেলার ইউনিয়নগুলোতে উপজেলা লেভেল থেকে অফিসার নিয়োগ দিয়েছি জন্মনিবন্ধন সনদ ও মৃত্যু সনদের বিষয়টি সমাধানের জন্য। এ ছাড়াও মন্ত্রণালয় থেকে ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে একজন করে প্রশাসক নিয়োগের বিষয়ে বলা হয়েছে। তবে প্রশাসক নিয়োগ দেবেন ডিসি স্যার। আমার কাছ থেকে অনুপস্থিত চেয়ারম্যানদের তালিকা নেওয়া হয়েছে।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার উপপরিচালক এস.এম গোলাম কিবরিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, যেসব ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া লাগবে আমরা সেসবের তালিকা করে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে পাঠিয়েছি। সেখান থেকে অ্যাপ্রুভ হয়ে প্রশাসক নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।
আরিফ আজগর/