টাঙ্গাইলে সাবেক বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, তার ভাই ভাই মজিবল হক পান্নাসহ ১২৯ জনের নামে দ্রুত বিচার আইনে মামলা করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাত আরও ১৫০-২০০ জনকে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (০৩ সেপ্টেম্বর) সকালে ওই মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট এম এ মালেক আদনান ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে সোমবার (০২ সেপ্টেম্বর) টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্রুত বিচার আদালতে মামলাটি করেন ঢাকার ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের আইন বিভাগের ষষ্ঠ সেমিস্টারের ছাত্র মনির হোসেন। তিনি জেলার নাগরপুর উপজেলার কলমাইদ গ্রামের নুরু মল্লিকের ছেলে।

ওই আদালতের বিচারক পশুপতি বিশ্বাস মামলাটি আমলে নিয়ে নাগরপুর থানাকে এফআইআর হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ জুলাই নাগরপুর কলেজ গেট এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সাবেক প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু ও তার ভাই মজিবল হক পান্নার নির্দেশে আসামিরা আগ্নেয়াস্ত্র, দা, কুড়াল ও লাঠিসোটাসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালান। এসময় আসামিরা ফাঁকা গুলি ছুড়ে এবং ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সেখানে ত্রাসের সৃষ্টি করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেন। এ ঘটনায় বাদীসহ অন্তত ১০ জন আন্দোলনকারী আহত হন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এম এ মালেক আদনান জানান, দণ্ডবিধির কয়েকটি ধারাসহ দ্রুত বিচার আইনে মামলাটি করা হয়েছে। আদালতের বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে বাদীর জবানবন্দি নেন। পরে মামলাটি নাগরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) এফআইআর হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন। মঙ্গলবার সকালে ওই কোর্ট থেকে আমাকে নির্দেশের বিষয়টি জানানো হয়েছে।

এদিকে টাঙ্গাইল সদর থানায় আরও দুইটি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও এমপিরা ছাড়াও উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নাম আছে।

সোমবার টাঙ্গাইল সদর থানায় ২০২১ সালে টাঙ্গাইলের সন্তোষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাবেক সহ-সভাপতি (ভিপি) নূরুল হক নূরসহ তার নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা করা হয়। গণঅধিকার পরিষদের দপ্তর সম্পাদক শাকিল উজ্জামান বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় মামলাটি করেন।

মামলায় বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ১৭ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাবেক সহ-সভাপতি (ভিপি) নূরুল হক নূরসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকীতে তার কবরে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন। টাঙ্গাইল শহরের সন্তোষ এলাকায় মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মুক্ত মঞ্চের কাছে পৌঁছানোর পর ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মানিক শীল ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নিবিড় পালের নেতৃত্বে তাদের ওপর হামলা করা হয়। তারা হত্যার উদ্দেশ্যে নূরুল হক নূরের ওপর হামলা চালান। তাদের হামলায় বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন। এছাড়া নেতাকর্মীদের কাছ থেকে নগদ ৫ লাখ ১৩ হাজার টাকা এবং কয়েকটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়। পরে কতিপয় পুলিশ সদস্যের সহায়তায় তারা জীবন নিয়ে ফিরে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালসহ ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। ঘটনার পর তারা মামলা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু থানা কর্তৃপক্ষ সে সময় মামলা গ্রহণে অসম্মতি জানায়।

এছাড়া গত শনিবার (০১ সেপ্টেম্বর) রাতে সদর থানায় টাঙ্গাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা ও গুলির করার অভিযোগে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি  ও একুশে পদকপ্রাপ্ত ফজলুর রহমান খান ফারুক, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহেরসহ ২৩০ জনের নামে মামলা করেছেন কালিহাতী উপজেলার চিনামুড়া গ্রামের আবু তালেবের ছেলে চিনা লাল মিয়া (৩০)।

এ মামলার আসামি করা হয়েছে- জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খন্দকার আশরাফউজ্জামান স্মৃতি, শাহজাহান আনছারী ও কুদরত এলাহী খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি সুভাষ চন্দ্র সাহা, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সোলায়মান হাসান, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মাহমুদ তারেক, উপদপ্তর সম্পাদক আনন্দ মোহন, টাঙ্গাইল পৌরসভার কাউন্সিলর হাফিজুর রহমান ওরফে স্বপন, সাবেক কাউন্সিলর সাজ্জাদ আহমেদ, কালিহাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজাহারুল ইসলাম তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মোল্লা, এলেঙ্গা পৌরসভার মেয়র নুর এ আলম সিদ্দিকীসহ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের। এছাড়া মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ১০০-১৫০ জনকে।

এই মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ আগস্ট ১১টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিল শহরের জেলা সদর সড়কের বিবেকানন্দ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে পৌঁছালে পূর্বপরিকল্পিতভাবে শটগান, পিস্তল, আগ্নেয়াস্ত্র, চাপাতি, রামদা, কুড়ালসহ দেশি অস্ত্র নিয়ে আসামিরা মিছিলে হামলা করেন। তাদের ছোড়া গুলিতে মিছিলে থাকা বাদী লাল মিয়ার বাম পায়ের হাঁটুর নিচে লাগে। পরে তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লোকমান হোসেন জানান, শনিবার ও সোমবার পৃথকভাবে দুইটি মামলা করা হয়েছে। একটি প্রায় তিন বছর আগের ঘটনার এবং আরেকটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা ও গুলির ঘটনা নিয়ে করা। তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অভিজিৎ ঘোষ/এফআরএস