‘নদী ভাঙনে ভেসে গেছে মা-বাবার কবরও’
‘রাস্তাঘাট-বাড়িঘর ভেঙে বিলীন হয়ে গেছে। ঘরের কোনো অস্তিত্ব নেই। মা-বাবার কবর ছিল, সেগুলোও ভেসে গেছে। এখন পথেঘাটে বাস করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।’
নদী ভাঙনে সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হওয়া সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার কুড়িকাহুনিয়া এলাকার বাসিন্দা আবদুল মান্নান বলছিলেন তার ক্ষতির কথা।
বিজ্ঞাপন
আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কুড়িকাহুনিয়া পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার সড়ক। ২০২০ সালে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের সময় কপোতাক্ষ নদের বাঁধ ভেঙে স্রোতের তোড়ে এই সড়কটি ভেঙে যায়। রাস্তার মাঝে তৈরি হয় কৃত্রিম খাল। সেখানে থইথই করছে পানি।
ভাঙনে বিলীন হওয়া রাস্তাটির দক্ষিণ পাশে ছিল আবদুল মান্নানের ঘর। সেখানে চারটি ঘরে মোট ১৮ জন মানুষ বসবাস করতেন। রাস্তা ভেঙে তাদের সবার ঘরই বিলীন হয়ে যায়।
চার বছর ধরে এই সড়কে যান চলাচল বন্ধ আছে। এতে ১০ কিলোমিটার ঘুরে যাতায়াত করছেন এ অঞ্চলের বাসিন্দারা। স্কুল, কলেজ ও মাদরাসাগামী শিক্ষার্থীসহ ইউনিয়নের গোকুলনগর, নাকনা, গোয়ালকাটি, সোনাতনকাটি, শ্রীপুর, কুড়িকাহুনিয়া এবং পার্শ্ববর্তী কয়রা উপজেলার মানুষ চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।
প্রতাপনগর এলাকার গোলাম সরোয়ার বলেন, বাড়ির সামনে ছোট একটি খাল ছিল। এই আম্ফান এসে নদী ভাঙনে আমাদের রাস্তাঘাট-ঘরবাড়ি সব চলে গেছে। তারপর থেকে আমরা খুব কষ্ট করে নৌকায় চলাফেরা করি। অনেক বাচ্চাকাচ্চা অসুস্থ হয়ে মারাও যায়। আর গরু-ছাগল নৌকায় করে পারাপার করানো অনেক কষ্টের। আমাদের রাস্তাটি দ্রুত ঠিক করে দেওয়ার জন্য আবেদন জানাই।
প্রতাপনগর এলাকার হাফিজা খাতুন বলেন, এখানে কোনো রাস্তাঘাট নেই। প্রতিদিন আমাদের দুই-তিনবার এই খাল পার হতে হয়। প্রতিবার পাঁচ টাকা করে লাগে। আমাদের কিছু দরকার নেই, শুধু রাস্তাটা হলে একটু চলাচল করতে পারব।
প্রতাপনগর এলাকার মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আম্ফানে আমার ঘরবাড়ি সব ভেঙে নিয়ে গেছে। এখন আমার থাকার কোনো আশ্রয় নেই। আমার আব্বার কবর যেখানে ছিল সেখানেও এখন ১৩ হাত পানি। এই অবস্থার মধ্যে আছি। এখন পর্যন্ত টঙের উপর থাকি। একটি ঘর বেঁধে থাকার উপায় হয়নি। এভাবে আমাদের খুব সমস্যা হচ্ছে। রাস্তাটি যেকোনো মূল্যে যেন ঠিক করে দেওয়া হয় আমাদের এই একটাই দাবি।
আশাশুনি উপজেলার মিলন বিশ্বাস বলেন সাত গ্রামের মানুষের চলাচলের প্রধান সড়ক এটি। আম্ফানের সময় ভেঙে যাওয়ার পর চার বছরেও সংস্কার করা হয়নি। হাজার হাজার মানুষ ও স্কুলের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন চরম দুর্ভোগে পড়েন। রাত-বিরাতে মানুষকে যাতায়াত করতে হয় নৌকা পারাপারের মাধ্যমে। চার বছরে কোনো জনপ্রতিনিধিকেও ব্যবস্থা নিতে দেখিনি আমরা।
সাতক্ষীরা আশাশুনি উপজেলার ১০ নম্বর প্রতাপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দাউদ ঢালী বলেন, কড়িকাহুনিয়ায় ভাঙা জায়গাটির পাশ দিয়ে একটি রাস্তা করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু ওই সময় জমির মালিকরা সেটি করতে দেননি। উনারা বলেছেন ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যে সোজা রাস্তাটি চলে গেছে, সেভাবেই করতে হবে। কিন্তু সেখানে প্রায় ৩০ ফুটের মতো পানি। এ জন্য বাঁধ দেওয়া সম্ভব হয়নি। এখানে বাঁধ বানাতে হলে বড় প্রকল্প দরকার। ইউনিয়ন পরিষদে এসব বড় প্রকল্প দেওয়া হয় না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি।
ইব্রাহিম খলিল/এফআরএস