কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব-কুলিয়ারচর) আসনের সাবেক এমপি নাজমুল হাসান পাপনসহ ১১৭ জনকে আসামি করা দ্রুত বিচার আইনে মামলা করা হয়েছে। এর আগে পাপনকে প্রধান আসামি করে কিশোরগঞ্জে আরও তিনটি মামলা হয়।

রোববার (১ সেপ্টেম্বর) কিশোরগঞ্জ আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) ট্রাইব্যুনালে মামলাটি দায়ের করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পঙ্গু হয়ে যাওয়া মামুন মিয়া নামে এক পরিবহন শ্রমিক।

কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পার্থ ভদ্র অভিযোগটি আমলে নিয়ে ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) মামলা নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী স্বপন কুমার সরকার।

মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন— ভৈরব উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সেন্টু, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের এপিএস সাখাওয়াত মোল্লা, সহসভাপতি মির্জা সোলায়মান, ভৈরব পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিক আহমেদ সৌরভ, আওয়ামী লীগ নেতা সেফাত উল্লাহ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রাকিব রায়হানসহ ১১৭ জন। এছাড়া আরও ১০ থেকে ১৫ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে।

মামলার বিবরণে জানা যায়, গত ১৯ জুলাই দুপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ট্রাকে তেল নেওয়ার জন্য স্থানীয় একটি পাম্পে যাচ্ছিলেন মামলার বাদী মামুন। ভৈরবের শহিদুল্লাহ কায়সার পাদুকা মার্কেটের সামনে পৌঁছালে আসামিরা বিভিন্ন অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে শান্তি সমাবেশের নামে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। সেখানে নাজমুল হাসান পাপনের হুকুমে কয়েকজন আসামি শটগান ও পাইপগান দিয়ে ফাঁকা গুলি ছুড়তে থাকে। এ সময় ছাত্র-জনতা নিজেদের আত্মারক্ষার জন্য পালিয়ে জীবন রক্ষা করে।

এ সময় বাদী মামুনকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কর্মী মনে করে আসামিরা দা ও ছুরি দিয়ে কুপিয়ে একটি হাত প্রায় বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। এছাড়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে ও পিটিয়ে মারাত্মক জখম করেন। লোকজন তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার ডান হাত কেটে ফেলতে হয়েছে।

কিশোরগঞ্জ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী স্বপন কুমার সরকার জানান, বাদীর অভিযোগটি বিচারক গ্রহণ করে ভৈরব থানার ওসিকে এজাহার হিসেবে রেকর্ড করে ঘটনা তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

কিশোরগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট সাজ্জাদুল হক জানান, এ নিয়ে জেলায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা হলো। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে এতে আরও অনেক মামলার হওয়ার কথা। সেই রকম প্রস্তুতি চলছে।  

প্রসঙ্গত, এর আগে নাজমুল হাসান পাপনকে প্রধান আসামি করে ২৩৩ জনের বিরুদ্ধে ভৈরব থানায় আরও দুটি মামলা ও কিশোরগঞ্জ সদর থানায় ৮৮ জনকে আসামি করে একটি মামলা করা হয়েছে। তিনটি মামলায় প্রধান আসামি পাপন।

এর মধ্যে দুটি মামলা ভৈরবে ১৯ জুলাই বিএনপির অফিস ভাঙচুর ও রুবেল নামে একজনকে গুরুতর আহত করার ঘটনায় এবং কিশোরগঞ্জে আগুনে পুড়ে দুজন নিহত হওয়ার ঘটনায় একটি মামলা।

হৃদয়/এসএম