সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান ও বি এম ফরহান হোসেন

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনের সাবেক দুই সংসদ সদস্য সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান ও বি এম ফরহান হোসেনসহ ১১৮ জনের নামে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিস্ফোরক আইনে মামলা হয়েছে। মামলায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠন, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা, আট ইউপি চেয়ারম্যান ও একাধিক শিক্ষককে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাত আরও ২০০-৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

রোববার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জহিরুল ইসলাম এজাহারটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করার জন্য নাসিরনগর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন।

উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নের বাসিন্দা ও উপজেলা কৃষক দলের সদস্যসচিব শাহা আলম পাঠান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

মামলায় উল্লেখ্যযোগ্য অন্য আসামিরা হলেন- কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক নাজির মিয়া এবং তার স্ত্রী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রুমা আক্তার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অসীম পাল, সাধারণ সম্পাদক লতিফ হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ টি এম মনিরুজ্জামান সরকার, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদরের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আবদুল আহাদ, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান প্রদীপ কুমার রায়, আশুতোষ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুর রহিম মাস্টার, জেলা পরিষদের সদস্য হাকিম রাজা, সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও ধরমন্ডলের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বাহার উদ্দিন চৌধুরী, মন্দির হামলার অন্যতম প্রদান আসামি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান দেওয়ান আতিকুর রহমান ওরফে আঁখি, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শুভ সিদ্দিক, সাধারণ সম্পাদক রাহুল রায়, সাবেক সাধারণ সম্পাদক বশির আল হেলাল, যুবলীগের আহ্বায়ক রায়হান আলী ভূইয়া ও যুগ্ম আহ্বায়ক বানু চন্দ্র দেব, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নির্মল চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন, যুবলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত আলী, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতির পদ থেকে বহিষ্কৃত মো. নাসির মিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়কের পদ থেকে বহিষ্কৃত ও সাবেক সংসদ সদস্য একরামুজ্জামানের ব্যক্তিগত সহকারী এনামুল হুদা, গুনিয়াউক, চাতলপাড়, পূর্বভাগ, ফান্দাউক, চাপরতলা, ভলাকুট, গোয়ালনগর, হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিতু মিয়া, রফিকুল ইসলাম, আক্তার হোসেন, মো. ফারুকুজ্জামান, মনসুর মিয়া (মনসুর আলী ভূইয়া), রুবেল মিয়া, আজহারুল ইসলাম ও ফারুক মিয়া, ধরমন্ডলের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বাহার উদ্দিন চৌধুরী, মন্দির ভাঙার আসামি হাজী সুরুজ আলী প্রমুখ।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ আগস্ট বেলা ১১টায় নাসিরনগর উপজেলার বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় শেখ হাসিনার পতনের এক দফা দাবিতে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা মিছিল নিয়ে জড়ো হন। বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ মিছিলে মামলার আসামিরা ককটেল, হাত বোমা, পিস্তল, দা, লাঠিসোঁটা নিয়ে জড়ো হন। মামলার প্রধান আসামি সাবেক সংসদ সদস্য একরামুজ্জামান, দ্বিতীয় ও তৃতীয় আসামি সাবেক সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেন ও কৃষক লীগ নেতা নাজির মিয়ার নির্দেশে অন্য আসামিরা হাতে থাকা কালো পলিব্যাগ থেকে ককটেল ও হাত বোমা বের করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ মিছিলে নিক্ষেপ করেন। এতে পুরো এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। বিস্ফোরিত বোমার স্প্রিন্টারের আঘাতে ছাত্র-জনতা মারাত্মক আহত হন এবং জানমালের ক্ষতি হয়। মামলার আসামিরা দা, লাঠি, লোহার রড, হকিস্টিক দিয়ে ছাত্র-জনতা ও পথচারীদের এলোপাতাড়ি মারধর করেন। এ ছাড়া বিএনপির কার্যালয়ের সামনে থাকা ১৫-২০টি মোটরসাইকেলে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে ১ কোটি ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। মামলায় নাসিরনগর সরকারি বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ বি এম ছালেম, শিক্ষক আলমগীর মিয়াসহ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষককেও আসামি করা হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতির সভাপতি কামরুজ্জামান মামুন জানান, আদালত নাসিরনগর থানা পুলিশের ওসিকে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।

মাজহারুল করিম অভি/এমজেইউ