ফেনীতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা
এক সড়কেই ১৭ ভাঙন
প্রতিবছরই নিয়মিত বন্যার কবলে পড়তে হয় ফেনীর উত্তরাঞ্চলের লাখো মানুষকে। তবে এবার সবকিছু ছাপিয়ে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখি হয়েছে এই জনপদ। বন্যার পানিতে নিমজ্জিত ছিল ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, মাছের ঘের ও ফসলি জমি।
বন্যা পরবর্তী বেশিরভাগ উপজেলার গ্রামীণ সড়কগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তেমনি জেলার ফুলগাজী উপজেলার দরবারপুর ইউনিয়নের জগতপুর গ্রামের একটি সড়কেই ১৭টি স্থানে ভাঙনের চিত্র দেখা গেছে। এতে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষ।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে দেখা যায়, বন্যার পানির প্রবল স্রোতে দরবারপুর থেকে শ্রীচন্দ্রপুর পর্যন্ত সড়কের ১৭টি অংশে ভেঙে গেছে। তীব্র স্রোতের সঙ্গে তলিয়ে গেছে সড়কের পাশে থাকা দোকানপাট-ঘরবাড়ি। চলাচলের জন্য কয়েকটি অংশে বাঁশ বেধে ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছেন স্থানীয়রা। সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় বন্যাদুর্গত মানুষরা ত্রাণ সহায়তা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন।
শহিদুল্লাহ নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, শ্রীচন্দ্রপুর থেকে দরবারপুর পর্যন্ত চলাচলে খুবই কষ্ট হচ্ছে। পানির তীব্র স্রোতে সড়ক ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় বন্যাদুর্গত হয়েও ঠিকভাবে সহায়তা পাচ্ছি না। অসুস্থ রোগীদের নিয়ে সীমাহীন কষ্ট হচ্ছে।
বয়োবৃদ্ধ আবদুল আউয়াল নামে আরেকজন বলেন, ৭৩ বছর বয়সের মধ্যে এমন ভয়াবহ বন্যা আর কখনো দেখিনি। ঘরের মধ্যেই পানিতে ঠাঁই পাইনি। প্রবল স্রোতে মুন্সিরহাট থেকে আসা এই সড়কটি একদম শেষ হয়ে গেছে। সড়কের পাশে থাকা দোকানপাট-ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। দ্রুত মেরামত করা না হলে মানুষজন অনেক কষ্টকর করবে।
নাহিদুল ইসলাম নামে এক যুবক বলেন, এতো বড় দুর্যোগ এখানকার মানুষ আর কখনো দেখেনি। এ রাস্তাটি সংস্কার করে দ্রুত চলাচলের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। ভেতরের এলাকায় রাস্তা ভাঙা থাকায় ঠিকভাবে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সড়কটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
এ ব্যাপারে ফুলগাজী উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ আসিফ মাহমুদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, জগতপুর-মনিপুর সড়কটি উপজেলা এলজিইডির এক নম্বর তালিকাভুক্ত সড়ক ছিল। বন্যায় এটি খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একইভাবে উপজেলার প্রায় সবগুলো সড়ক বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারমধ্যে যেগুলো একদম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে তা পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে সড়কগুলো মেরামতের জন্য আলোচনা চলছে।
প্রসঙ্গত, বন্যায় জেলায় এলজিইডি ও সড়ক বিভাগের আওতাধীন সড়কের আনুমানিক ১৪০ কোটি ৪৮ লাখ ৪৭ হাজার টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
তারেক চৌধুরী/আরকে