বরিশাল মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন সিকদারের অনুসারীদের চাঁদা না দেওয়ায় বিএনপি নেতাসহ থ্রি-হুইলার চালকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে কমপক্ষে ১২ জন আহত হয়েছেন। এ সময় বেশ কয়েকটি থ্রি-হুইলার ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে পুরো এলাকায়।

শুক্রবার (৩০ আগস্ট) রাত সোয়া ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত নগরীর রূপাতলী বাস টার্মিনালে এই ঘটনা ঘটে।

থ্রি-হুইলার চালকরা জানিয়েছেন, বিগত সময়ে একটি সিন্ডিকেট থ্রি-হুইলার প্রতি ৫০ থেকে ৭০ টাকা এবং বাস থেকে ৮০ থেকে ১২০ টাকা চাঁদা তুলতো। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থ্রি-হুইলার চালকরা চাঁদা দেওয়া বন্ধ করে দেন। কিন্তু বিএনপির সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন সিকদারের অনুসারী কালাম চৌধুরী, আব্দুর রাজ্জাক বাস টার্মিনালে প্রতিটি বাস থেকে ১০০/১২০ টাকা চাঁদা উত্তোলন শুরু করেন। শুধু বাস টার্মিনাল নয় তারা রূপাতলী গোল চত্বর থেকে বিভিন্ন জেলায় যাত্রী পরিবহন করা সিএনজি প্রতি ১০০ ও মাহিন্দ্রা থেকে ২০০ টাকা করে চাঁদা তুলতে শুরু করেন।

থ্রি-হুইলার চালক সাগর বলেন, আমরা বিএনপি নেতা রাজীব মোল্লার মার্কেটের সামনে থেকে গাড়ি ছাড়ি। শ্রমিক ইউনিয়ন দখল করে নিজেকে শ্রমিক নেতা বলা কালাম, রাজ্জাক এসে চাঁদা চাইতো। আমরা বিষয়টি রাজীব মোল্লাকে জানালে তিনি চাঁদা না দিতে বলেন। আমরা চাঁদা দিতে অপারগতা দেখাই। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নাতি কালামের নেতৃত্বে আমাদের ওপর হামলা করা হয়।

আরেক মাহিন্দ্রা শ্রমিক মনির হোসেন বলেন, নাতি কালাম, রাজ্জাক আমাদেরকে এসে বলতো আগে আওয়ামী লীগকে চাঁদা দিয়েছ, এখন জিয়া সিকদার দায়িত্ব নিয়েছে। তার নেতৃত্বে বাস টার্মিনাল চলবে। তোমরা টাকা না দিলে সংগঠন চলবে কীভাবে?

২৫নং ওয়ার্ড বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রাজীব মোল্লা বলেন, মহানগরের আহ্বায়ক কমিটির এক নেতার অনুসারীরা বাস টার্মিনালে চাঁদাবাজি করছে। আওয়ামী লীগ সরকার পালিয়ে যাওয়ার পরে তাদেরকে চাঁদাবাজি না করার আহ্বান জানাই। কিন্তু তারা কোনো কথা না শুনে চাঁদাবাজি চালিয়ে যান। সর্বশেষ শুক্রবার সিএনজি, মাহিন্দ্রা চালকরা আমার কাছে আসলে আমি চাঁদাবাজি যেন না করে সেজন্য শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলতে যাই। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শ্রমিক ইউনিয়ন দখলে নেওয়া কালাম, রাজ্জাকের নেতৃত্বে আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়।

তিনি বলেন, ১২ জনকে মারধর করেছে। এরমধ্যে সাতজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। ৮/১০টি গাড়ি ভাঙচুর করেছে হামলাকারীরা। যারা হামলা করেছে, তারা আগে আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করতো। এখন বিএনপির এক নেতার অনুসারী হয়ে বাস টার্মিনাল এলাকায় চাঁদাবাজি করছেন।

হামলায় আহত এক মাহিন্দ্রা শ্রমিক বলেন, আমরা চাঁদা দিবো না এই কথা জানানোর পরই শ্রমিক ইউনিয়নের শতাধিক লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে এসে আমাদের মারধর করেন। ওখানকার দোকানদারদেরও মারেন। এমনকি আজকে সকালে অনেকের গাড়ির চাবি নিয়ে গেছে।

হামলার পরপরই থ্রি-হুইলার চালকরা এক হয়ে সড়কে এবং বাস শ্রমিকরা টার্মিনালে লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান নেন। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি শান্ত করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, উভয় পক্ষকে নিয়ে জিয়া উদ্দিন সিকদারের ব্যক্তিগত অফিসে রাতে বৈঠকও করেছেন।

অভিযোগের বিষয়ে শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা কালাম চৌধুরী বলেন, শ্রমিকরা যোগ্য নেতৃত্ব চায়। তারা আমাকে শ্রমিক ইউনিয়নের দায়িত্ব দিয়েছেন। এর বিপরীতে কয়েকজন আরেকটি কমিটি গঠনের চেষ্টা চালিয়েছে। সাধারণ শ্রমিকরা গতকাল রাতে তাদের নিষেধ করে এসেছে।

তিনি বলেন, বাস টার্মিনাল থেকে বিএনপির সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন সিকদারের নামে কোনো চাঁদা তোলা হয় না।

বাস মালিক সমিতির সদস্য ও ২৫নং ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক আকতারুজ্জামান দোলন জানিয়েছেন, শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা পরিচয় দিয়ে কালাম, রাজ্জাকসহ একটি সিন্ডিকেট চাঁদাবাজি করছে। এদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কঠোর হওয়া উচিত।

এসব বিষয়ে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন সিকদারের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পরে লাইন কেটে দেন। এরপর আর কল রিসিভ করেননি।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এএমকে