যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার কায়েমকোলা থেকে ঝিকরগাছা ভায়া শ্রীরামপুর আঞ্চলিক ৮ কিলোমিটার সড়কের ঘোড়দাহ-ফুলবাড়ির মাঝামাঝি কপোতাক্ষ শাখা নদের ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে একটি ব্রিজ। দীর্ঘ কয়েকমাস বন্ধ থাকার পর গত দেড় মাস আগে থেকে পুনরায় সেটির নির্মাণকাজ শুরু হলেও তা ধীরগতিতে চলছে। এটির কারণে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন ১০ গ্রামের মানুষ।

বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) ব্রিজের পাশ থেকে তৈরি করা বিকল্প রাস্তা (সাইড ব্রিজ) খালের পানির স্রোতে ভেঙে যায়। এর ফলে সড়কপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ও ভোগান্তিতে পড়েন এ পথ দিয়ে চলাচলকারী দুইপাশের প্রায় ৮-১০টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। ঝুঁকি নিয়ে ব্রিজের ওপর থেকে বাঁশ, মই দিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে তাদের। বন্ধ আছে ছোটখাটো যানবাহন চলাচলও।

জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে প্রোগ্রাম ফর সাপোর্টিং রুরাল ব্রিজেস প্রকল্পের আওতায় ৩ কোটি ৪৮ লাখ ২৭ হাজার টাকা ব্যায়ে ৩০ মিটার দৈর্ঘ্যের এ পিএসসি গার্ডার ব্রিজের নির্মাণকাজ চলছে। এটির কাজ শুরু হয় ২০২২ সালে ১৪ ফেব্রুয়ারি। ২০২৩ সালের ৮ আগস্টের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন সেটি হয়নি।

স্থানীয় এলাকাবাসী ও নির্মাণ শ্রমিকদের অভিযোগ, দীর্ঘ কয়েক মাস ব্রিজের নির্মাণকাজ বন্ধ ছিল। এরপর গত দেড় মাস আগে নির্মাণকাজ শুরু হলেও তা টালমাটাল অবস্থায় চলছে। সঠিকভাবে মজুরি না পাওয়ায় কাজ করতে অনীহা প্রকাশ করছেন শ্রমিকরা। অপরদিকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় এবং বিকল্প সাইড ব্রিজ পানির স্রোতে ভেঙে যাওয়ায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ঝুঁকি নিয়ে নির্মাণাধীন ব্রিজের ওপর দিয়ে রড ডিঙিয়ে বাঁশ, মই দিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে তাদের।

স্থানীয় সমাজকর্মী আশিকুর রহমান জানান, শুরু হওয়ার পর থেকে বেশ কয়েকমাস ব্রিজের নির্মাণকাজ বন্ধ ছিল। হঠাৎ গত বৃহস্পতিবার নদীর পানির স্রোতে বিকল্প সাইড ব্রিজটিও ভেঙে যায়। এটি মেরামত করা স্থানীয়দের পক্ষে সম্ভব না। এদিকে বিকল্প রাস্তা ভেঙে গেলে সেটি মেরামতেরও কোনো উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

তিনি আরও জানান, জয়রামপুর, ঘোড়দাহ, ফুলবাড়ি, দৌলতপুর, শ্রীরামপুর, তীপ্তিপুরসহ প্রায় ১০টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করেন। নির্মাণ শ্রমিকরাও অভিযোগ করছেন তারা ঠিকঠাক মজুরি পাচ্ছেন না। ফলে তারাও কাজ করতে অনীহা প্রকাশ করছেন।

আলমগীর হোসেন নামে এক ইজিবাইক চালক বলেন, গত কয়েকদিন ব্রিজের বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করে যাত্রী নিয়ে চলাচল করেছি। এখন সেটি ভেঙে যাওয়ায় এপাশ থেকে ওপাশে যাওয়া যাচ্ছে না। যাত্রীদের এখানে নামিয়ে দিচ্ছি। তারা ঝুঁকি নিয়ে মই, বাঁশ দিয়ে ব্রিজ পার হচ্ছেন।

ঘোড়দাহ গ্রামের বাসিন্দা আরিফুর রহমান বলেন, আমার মাকে ঝিকরগাছায় ডাক্তার দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলাম। ফেরার পথে অনেক কষ্ট করে কোলপাজা করে ব্রিজ পার করেছি। শিশু, বৃদ্ধ এবং নারীরা ঝুঁকি নিয়ে লোহা, রডের মধ্যে দিয়ে ব্রিজ পার হচ্ছেন। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ব্রিজটি দ্রুত নির্মাণ হওয়া জরুরি। সেইসঙ্গে বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি।

মাগুরা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আকরাম হোসেন বলেন, কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে এক বছর আগে। তবে এর মধ্যে প্রথম ঠিকাদার মারা গেছেন। পরে ঠিকাদার চেঞ্জ হয়েছে। চলাচলের জন্য ব্রিজের পার্শ্ব রাস্তা হিসেবে সাইড ব্রিজ নির্মাণের জন্য ঠিকাদারদের বরাদ্দ ছিল। এর আগে ২-৩ বার সাইড ব্রিজ ভেঙেছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা কোনোভাবেই গুরুত্ব দিচ্ছে না। সাইড ব্রিজের বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও দায়সারাভাবে সেটি নির্মাণ করায় কিছুদিন পর পর এমন দুর্ঘটনা ঘটছে।

তিনি বলেন, আমি আগামীকাল (শনিবার, ৩১ আগস্ট) ব্রিজের ওখানে গিয়ে ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলব। দেখি তারা কি করে।

এ বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার অপুকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

ঝিকরগাছা উপজেলা প্রকৌশলী সায়ফুল ইসলাম মোল্লা বলেন, সাইড ব্রিজের ওখানে আগে পাইপ দেওয়া ছিল। পরে জলাবদ্ধতার কারণে পাইপ সরিয়ে লোহার পাটাতন দেওয়া হয়। সাইড ব্রিজ পুনরায় ভাঙার বিষয়টি আমি জেনেছি। আমি খোঁজ খবর নিচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এর আগে ঠিকাদারও কয়েকবার চেঞ্জ হয়েছে। ব্রিজের কাজ শেষের পথে। তবে বর্তমান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ সময়সীমা বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছে বলে জানতে পেরেছি। আশা করি দ্রুতই কাজটি শেষ হবে।

এ্যান্টনি দাস অপু/এফআরএস