বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস পালন করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সায়েন্স ক্লাব

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৭ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় এক কোটি ১০ লাখ মানুষ থ্যালাসেমিয়ায় বাহক। তাই সচেতনতা বাড়াতে প্রথমবারের মতো বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস পালন করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সায়েন্স ক্লাব। এ উপলক্ষে জুম অ্যাপের মাধ্যমে সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে।

এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বিশ্বব্যাপী থ্যালাসেমিয়া রোগীদের মাঝে স্বাস্থ্যসেবার অসমতাকে আলোকপাত করা।’ সেমিনারে অংশ নেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫০ জনের অধিক শিক্ষার্থী।

রাবি সায়েন্স ক্লাবের সভাপতি মো. ইশতেহার আলীর পরিচালনায় সেমিনার সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আবিদ হাসান। সেমিনারের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্ঠাকালীন সহসভাপতি ও স্থায়ী কমিটির সদস্য অলোক কুমার পাল।

এতে প্রধান আলোচক ছিলেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির স্কুল অব এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড লাইফ সায়েন্সেস সহযোগী অধ্যাপক ও বায়োমেডিকেল রিসার্চ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ড. মো. সারোয়ার হোসাইন। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারপারসন অধ্যাপক মাসুমা রহমান।

মাসুমা রহমান বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত জানতে পারিনি; বাংলাদেশে কতজন থ্যালাসেমিয়া রোগী আছেন। আপনাদের মধ্যে যদি কারও একজনের থ্যালাসেমিয়া থাকে; তিনি শুধু জানেন ভয়াবহতা। থ্যালাসেমিয়া এমন একটা রোগ যে আপনার সঙ্গে কবর পর্যন্ত যায়। তার মানে প্রতি মাসেই আপনাকে রক্ত দিতে হবে; ওষুধ থেতে হবে। ফলে তার পরিবার আর্থিকভাবেও সমস্যার সম্মুখীন হয়। যদি কারো থ্যালাসেমিয়া মনে হয়; তাহলে তাকে থ্যালাসেমিয়া সেন্টারে এসে পরীক্ষা করতে হবে। আমাদের দেশে এ রোগ হলে শুধু রক্তের ওপর নির্ভর করতে হয়। ওষুধ খেতে হয়।এর বাইরে তেমন সুযোগ-সুবিধা নেই।

এ রোগ সম্পর্কে সচেতনতার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের এ সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত। হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ও জানতে হবে আমাদের। পরবর্তী বাহক আসার আগে হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত। হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক থাকলে পরবর্তী পরীক্ষাগুলো করা উচিত। এখন থ্যালাসেমিয়ার অনেক রোগী আছেন; যারা রক্তের জন্য অনেকের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। তাই আমাদের যুব-সমাজের সবাইকে রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ করা সহজ। তাই আমাদের উচিত এটি প্রতিরোধের ওপর জোর দেওয়া।

কেন হয় থ্যালাসেমিয়া?

বিশ্বে বংশগত যে রোগ নিয়ে শিশু জন্মের হার বাড়ছে; তার মধ্যে থ্যালাসেমিয়া অন্যতম। রক্তে লোহিত রক্তকণিকার হিমোগ্লোবিনের অস্বাভাবিক অবস্থার কারণে হয়ে থাকে এ রোগ। ত্রুটিপূর্ণ জিন হিমোগ্লোবিনের গ্লোবিন অংশে ত্রুটি সৃষ্টি করে। ফলে লোহিত রক্তকণিকার আয়ু স্বাভাবিক ১২০ দিন থেকে কমে মাত্র ২০-৬০ দিনে নেমে আসে। 

এতে মারাত্মক রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। ফলে এ রোগে আক্রান্ত রোগীকে নিয়মিত রক্ত না দিলে তার পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব হয় না। তাই প্রতি মাসে এক বা একাধিকবার রক্ত দিতে হয়।

বাবা-মা দুজন যদি থ্যালাসেমিয়ার বাহক হন, তাহলে শিশুর থ্যালাসেমিয়া নিয়ে ভূমিষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা ২৫%, বাহক শিশু জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনা ৫০% আর সুস্থ শিশু জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনা ২৫%।

এ রোগ থেকে বাঁচার প্রধান মাধ্যম সচেতনতা। রোগীদের চিকিৎসা বলতে প্রতি মাসে রক্ত নেওয়া ও চিকিৎসকের কাউন্সিলে থাকা। তবে সম্পূর্ণ নিরাময়ের জন্য আজকাল বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা হয়। এছাড়া রয়েছে বেশ কিছু থেরাপি।

থ্যালাসেমিয়া নীরব ঘাতক। কেবল একজন ব্যক্তিকে প্রভাবিত করে না, একটি পরিবারকে আর্থিক মানসিক দিক থেকেও প্রভাবিত করে। তবে আশার কথা- এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়। সামাজিক সচেতনতা এবং থ্যালাসেমিয়াবিষয়ক জ্ঞানই পারে এ রোগের প্রাদুর্ভাব কমাতে।

তথ্য-উপাত্ত বলছে, দেশে মারাত্মক থ্যালাসেমিয়া রোগীর সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার। এর বাহকদের পরস্পরের মধ্যে বিয়ের মাধ্যমে প্রতি বছর নতুন করে ৭ থেকে ১০ হাজার থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুর জন্ম নিচ্ছে। সচেতনতার অভাবে দিনে দিনে এ রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এএম