গোমতীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার খুশির খবরের মধ্যেই কুমিল্লায় ঝরছে অবিরত বৃষ্টি। ফলে বন্যাদুর্গত মানুষদের জন্য এ যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা। বৃষ্টির ফলে ত্রাণ সহায়তা বিঘ্নিতসহ নানান সংকটে পড়েছেন জেলার ১৪ লাখ বানভাসি।

বুধবার (২৮ আগস্ট) ভোর থেকে অনবরত বৃষ্টি ঝরছে জেলার ১৭টি উপজেলাতেই। বন্যা কবলিত ১৪টি উপজেলার অবস্থা আরও বেগতিক করেছে এই বৃষ্টি।

এদিন বেলা ১২টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বৃষ্টি অব্যাহত আছে। তবে কোথাও থেমে থেমে, কোথায় একনাগাড়ে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির মাত্রা কোথায় ঝিরিঝিরি, কোথায় হালকা এবং কোথাও হালকা থেকে মাঝারি আকারের।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ভারতের বিহার ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে দেশটির হরিয়ানা, পশ্চিমবঙ্গ, আসামসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ভারী বর্ষণ হচ্ছে। যার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের কিছু এলাকায়। দুর্বল হয়ে লঘুচাপটি মৌসুমি বায়ুর আকার ধারণ করে বাংলাদেশের কুমিল্লাসহ বেশ কিছু এলাকায় বৃষ্টিপাত হচ্ছে।

কুমিল্লা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ আরিফুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় হালকা থেকে মাঝারি আকারের বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে।

অপরদিকে বৃষ্টির ফলে বন্যার্তদের পাশাপাশি দুর্গতি বেড়েছে ত্রাণ বিতরণ ও উদ্ধার কাজে অংশ নেওয়া স্বেচ্ছাসেবীদের। তারা বলছেন, একে তো বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে পথঘাট। নৌকা নিয়ে কোনোরকমে পানিবন্দি মানুষদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী ও ওষুধ বিতরণ দুরূহ। তারমধ্যে বৃষ্টির ফলে তাদের কার্যক্রম খুব করে ব্যাহত হচ্ছে।

অবিরত বৃষ্টির ফলে বন্যার পানি বাড়ছে জেলার দক্ষিণাঞ্চলের নাঙ্গলকোট, মনোহরগঞ্জ ও লাকসাম উপজেলায়। সেসব এলাকায় ত্রাণ ও উদ্ধার কাজ তুলনামূলকভাবে কম। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা স্বেচ্ছাসেবীদের সিংহভাগই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া এলাকায় তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। লাকসাম, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জ উপজেলায় নিম্নাঞ্চল হওয়ায় এসব উপজেলায় দুর্গম এলাকা বেশি। এসব এলাকায় নৌকা ছাড়া ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা একেবারে অসম্ভব। বৃষ্টির ফলে সেসব এলাকায় ত্রাণ সহায়তা দেওয়া মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বৃষ্টির ফলে ডাকাতিয়া, কাঁকড়ি ও সালদা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মো. ওয়ালিউজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, গোমতী নদীর পানি কমছে। তবে বৃষ্টি হলে আমাদের ঝুঁকিও বাড়ে। উজানের পানি বন্ধ না হলে এবং বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বন্যার পানি আরও বাড়ার শঙ্কা থাকে সবসময়।

আরিফ আজগর/এফআরএস