চারদিকে বলাবলি হচ্ছে গোমতীর বাঁধ ভেঙে গেছে। মানুষজন হৈচৈ করা শুরু করেছে। মসজিদ থেকেও মাইকিং করা হচ্ছে। ভয়ে হুমড়ি খেয়ে কোনোরকমে এক কাপড়ে বের হয়ে আসি। আশ্রয় নিই এই আশ্রয়কেন্দ্রে।

মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) দুপুরে ঢাকা পোস্টকে এসব কথা বলেন বন্যাকবলিত কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের পাঁচোড়া এলাকার সোনিয়া আক্তার।

তিনি বলেন, মানুষের ছোটাছুটি দেখে হাতের কাছে যা পেয়েছি, তা নিয়ে কোনোরকমে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে চলে যাই আশ্রয়কেন্দ্রে। পরদিন শুনি তলিয়ে গেছে আমাদের বসতঘর। এখন ঘরে কোমর পানি। আজ সকালে পানি ডিঙিয়ে দেখতে গিয়েছিলাম। ঘরের ভিটেতে পা রাখলেই দেবে যায়। ঘরের ভারী আসবাব দেবে কাত হয়ে গেছে। পানি সরার পর কী হয় আল্লাহই ভালো জানেন।

পাঁচোড়া আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া ওই এলাকার বাসিন্দা রোবেল মিয়া বলেন, দিনমজুরের কাজ করে ছোট একটা টিনের ঘর করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকতাম। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) রাতে গোমতীর বাঁধ ভাঙার পর এখন পর্যন্ত সেই ঘরে কোমর পানি।

তিনি বলেন, ঘরের খুঁটির গোড়ার মাটিও নরম হয়ে মিশে যাচ্ছে বানের পানিতে। আজ গিয়ে দেখলাম নড়বড়ে অবস্থা। যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে ঘরটি। খুবই দুশ্চিন্তায় আছি। আবার কী করে মেরামত করব।

ওই এলাকার বাসিন্দা মো. আল আমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুর্গতির কথা বলে শেষ করা যাবে না। ঘরের ভেতরে কিছু স্বর্ণালংকার ছিল, জমির দলিল ছিল। সব পানির সাথে ভেসে গেছে।

আমিনুল ইসলাম নামের এক বানভাসি বলেন, ২ কানি জমিতে ধানের চারা রোপণ করেছিলাম। কিছুদিন গেলেই সেগুলো পেকে যেত। কিন্তু এখন সেসব ধানী জমি চেনার কোনো উপায় নেই। কোন জমিটি আমার বোঝার উপায় নেই। যতদূর চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। ফসলের মাঠের দিকে তাকালে মনে হয় এটি একটি ছোট নদী। আমাদের সব শেষ হয়ে গেল।

কয়েকদিন ধরে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার সঙ্গে লড়াই করছে কুমিল্লার ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ মানুষ। ভারতের ডম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার রাতে ভেঙে পড়ে গোমতী নদীর বাঁধ। নিম্নাঞ্চলের লোকালয়ে পানি প্রবেশ করলে প্লাবিত হয় কয়েকশ গ্রাম। জেলার ১৭টি উপজেলার মধ্যে ১৪টি উপজেলায় হানা দিয়েছে ভয়াবহ এ বন্যা। ক্রমশ অবনতির দিকে যাচ্ছে বৃহৎ এ জেলার বন্যা পরিস্থিতি। বাস্তুচ্যুত হয়ে মানুষজন আশ্রয় নিয়েছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। ভয়াবহ এ বন্যার ফলে তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ফসলের মাঠ, মাছের ঘের, গরুর খামার, পোল্ট্রি খামারসহ হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি। বন্যার পর দৃশ্যমান হবে মানুষের ক্ষয়ক্ষতির ভয়াবহ চিহ্ন।

আরিফ আজগর/এসএসএইচ