ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে কুমিল্লা। জেলার ১৭টি উপজেলার মধ্যে ১৪টি উপজেলাই বন্যার পানিতে ভাসছে। বন্যা শুরুর পাঁচ দিন হতে চললেও ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে বন্যা পরিস্থিতি। জেলায় ১২ থেকে ১৪ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি, ফসলের মাঠ, মাছের ঘের, গরুর খামার, পোল্ট্রি খামারসহ ঘরবাড়ি। 

ভয়াবহ এই বন্যায় জেলাজুড়ে এখন পর্যন্ত প্রাণ গেছে প্রায় ১০ জনের। তাদের মধ্যে অর্ধেকই শিশু। বানের পানিতে তলিয়ে বিভিন্ন উপজেলায় এসব মানুষের মৃত্যু হয়েছে। 

উজানের পানি কাঁধে করে লোকালয়ে আনা জেলার একমাত্র নদী গোমতী। বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবাহের চার দিন পরও বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এ নদীর পানি। নিম্নাঞ্চলের লোকালয় প্লাবিত করেও ঝুঁকি কমছে না এ নদীর পানির প্রবাহে। উজানের পানি ভারত থেকে গোমতী নদী হয়ে জেলার অন্য নদী ডাকাতিয়া, সালদা এবং কাঁকড়ির প্রবাহ বাড়িয়েছে। এসব নদী ফেঁপে ওঠার পর প্লাবিত হয়েছে জেলার সিংহভাগ অঞ্চল। 

সোমবার (২৬ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে গোমতীর পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যা বাঁধ ভাঙার আগ পর্যন্ত ছিল ১৩৪ সেন্টিমিটার। চার দিনের মাথায় মোট ৯৯ সেন্টিমিটার পানির প্রবাহ কমেছে এ নদীর। 

গোমতীর পানির প্রবাহ কমতে থাকলেও নিম্নাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে নতুন করে। নদীর উত্তর পাশের বুড়িচং উপজেলা হয়ে ব্রাহ্মণপাড়া ও দেবিদ্বার উপজেলার বেশ কিছু এলাকায় প্লাবন সৃষ্টি করছে। মুহূর্তে মুহূর্তে পানিবন্দি হচ্ছেন সেসব এলাকার নিম্নাঞ্চলের মানুষ।  রোববার এবং সোমবার দুদিনে নতুন করে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার অন্তত ৪০টি গ্রাম এবং দেবিদ্বার উপজেলার অন্তত ২৫টি গ্রাম তলিয়েছে বানের পানিতে। এসব এলাকাসহ জেলায় মোট প্রায় ১২-১৪ লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। বাস্তুহারা হয়ে অনেকেই ঠাঁই নিয়েছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। অনেকেই আবার দূরের উঁচু স্থানে খোলা আকাশের নিচে ওপরে পলিথিনের সামিয়ানা টানিয়ে বসতি গড়েছেন কোনো রকমে। 

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলাজুড়ে ৭২৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৭০ হাজারের মতো মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। 

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবেদ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বন্যার্তদের জন্য জেলায় ১৮০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও নগদ ৪৫ লাখ টাকা অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সরকারি বরাদ্দ আমরা বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ করছি। এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মো. ওয়ালিউজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপরের পানিও ঝুঁকির। বর্তমানে গোমতীর পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঘণ্টায় দেড় থেকে ২ সেন্টিমিটার পানি কমছে। 

আরিফ আজগর/আরএআর