‘আমার স্বামী দেশের জন্য শহীদ হয়েছে, আমি চাই রাষ্ট্র বা সরকার আমার সন্তানদের দায়িত্ব নিক।’ এমন দাবি জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ কামরুজ্জামানের স্ত্রী শামীরা জাহান পপি (২৭)। শহীদ কামরুজ্জামানের পরিবার সর্ম্পকে জানতে চাইলে ঢাকা পোস্টের কাছে তিনি এই দাবি জানান।    

কামরুজ্জামান ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার চর কামারিয়া গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী মো. আব্দুর রাজ্জাকের দ্বিতীয় ছেলে। দাম্পত্য জীবনে কামরুজ্জামান দুই ছেলে ও এক মেয়ে সন্তানের জনক। এর মধ্যে দশ বছর বয়সী বড় মেয়ের নাম জারিন, মেঝো ছেলের নাম আতনান (৮) এবং ৫ মাস বয়সী ছোট ছেলের নাম গালিব আবরার।  

শামীরা জাহান পপি বলেন, আমার তিনটি সন্তান। ছাত্র আন্দোলনে আমার স্বামী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়ার পর এখন আমি দিশেহারা। ছোট ছোট এই সন্তানদের নিয়ে আমি এখন কোথায় যাব, কি করব। কে আমার সন্তানদের দায়িত্ব নিবে ? আমার স্বামী দেশের জন্য শহীদ হয়েছেন। তার শরীরে ৮টি গুলি লেগেছে। আমি চাই রাষ্ট্র এবং সরকার আমার সন্তানদের দায়িত্ব নিক।    

এ সময় শোকাহত পপি আরও বলেন, একজন স্ত্রীর কাছে স্বামী হারানোর বেদনা কত কষ্টের, তা বলে বুঝানো যাবে না। এরপরও আমার সান্ত্বনা আমার স্বামী দেশের জন্য শহীদ হয়েছেন। আমি চাই আমার স্বামীর জীবনের বিনিময়ে হলেও দেশ এবং সমাজ থেকে বৈষম্য দূর হোক।  

পপির বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত ৪ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে নিখোঁজ হন কামরুজ্জামান। এরপর অনেক খুঁজেও তার কোনো সন্ধান পাইনি। এ ঘটনার ১৬ দিন পর গত ১৯ আগস্ট পুলিশের মাধ্যমে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে তার গুলিবিদ্ধ মরদেহের সন্ধান পাই। এ সময় তার মরদেহের মাথা ও শরীরে ৮টি গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ময়নাতদন্ত করে লাশ দাফন করা হয়েছে। পরিবারের মতামতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরও বলেন, আমার বোনের তিনটি সন্তান। স্বামীহারা বোনের এখন কি হবে, তা ভেবে কোনো কিনার পাচ্ছি না। আমরা চাই সরকার এই এতিমদের পাশে দাঁড়াক।

প্রসঙ্গত, কামরুজ্জামান ঢাকার উত্তরায় বসবাস করে ভাড়ায় প্রাইভেটকার চালাত। তবে কিছুদিন আগে তিনি পোল্যান্ড যাওয়ার জন্য আবেদন করেছিল। এরই মাঝে দেশে আন্দোলন শুরু হলে গত ৪ আগস্ট তিনি উত্তারায় ছাত্রদের সঙ্গে মিছিলে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিখোঁজ হয়। এরপর গত ১৯ আগস্ট রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মরদেহের সন্ধান পেয়ে নিজ বাড়িতে এনে গত ২০ আগস্ট পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।  

আরকে