শিগগিরই দেশের মানুষ ভোটের অধিকার ফিরে পাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থ।

বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) বিকেলে ভোলায় দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

পার্থ বলেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর ড. ইউনূস এখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসেছেন, রাষ্ট্র মেরামতে যত সময় প্রয়োজন, আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দিতে চাই। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পাশে আছি। আওয়ামী লীগকে মানুষ এখন নব্য রাজাকার ডাকে, তাদের হাতে রক্তের লাল দাগ। ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে ছাত্র-জনতা, দিনমজুর, রিকশাওয়ালা, গৃহিনী কেউই আওয়ামী লীগের বুলেট থেকে রেখাই পাননি।

তিনি বলেন, আমাদের মাথায় রাখতে হবে আমরা যেন জল্লাদে পরিণত না হই। দেশের হিন্দু সম্প্রদায় ও দুর্বলের সাথে যেন কোনো অন্যায় না করা হয়। তাহলে সে বিচার হবে বাংলার মাটিতে। আশা করি খুব শিগগিরই দেশের মানুষ তাদের ভোটের অধিকার ফিরে পাবে, মানুষ ভোট দিয়ে নেতা বানাবে। আমরা ১৭ বছর অত্যাচারের শিকার হয়েছি, আমাদের দ্বারা যেন আর কেউ অত্যাচারিত না হয়। 

তিনি আরও বলেন, গত ১৭ বছর আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের মানুষের বুকের ওপর এমনভাবে চড়াও হয়েছিল যে, বাংলাদেশের মানুষ নিশ্বাস নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। প্রতিটা জায়গায় আন্দোলন করলে আমাদের রাজাকার-জামায়াত বলে আখ্যায়িত করত। যখন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলল, তখন আর শিক্ষার্থীরা সহ্য করতে পারেনি। তাই বাংলাদেশ থেকে ভেগে গেছে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিজেপি চেয়ারম্যান বলেন, তাদের রক্তের বিনিময়ে আমরা নতুন সরকার পেয়েছি। 

দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের কোনো কর্মকাণ্ডে যেন আন্দোলনে শহীদদের অসম্মান করা না হয়।

পার্থ বলেন, গত ১৭ বছরে দেশের মানুষ অনেক অত্যাচারিত হয়েছে। ৩০০টি সংসদীয় আসনে ৩০০ জল্লাদ দাঁড়িয়েছিল। এমন কোনো কাজ নেই যা আওয়ামী লীগের এমপিরা করেননি। বড় নেতা হওয়ার চেয়ে ভালো মানুষ হওয়া জরুরি। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারকে আমরা পতন করিনি, ছাত্ররাও তার পতন ঘটাতে পারেনি। শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটিয়েছে স্বয়ং আল্লাহ। অহংকার আল্লাহ পছন্দ করেন না। আমরা যেন অহংকারী না হই।

ভোলা সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের উদ্দেশে তিনি বলেন, গত ১৭ বছরে এমন কোনো অন্যায় বাকি নেই যা তিনি ও তার পরিবার করেনি। ফলাফল হিসেবে আজকে তিনি ও তার আত্মীয়স্বজন ভোলা থেকে পালিয়ে গেছেন। ৬৯’এর গণঅভ্যুত্থান নিয়ে আপনি গর্ব করে রাস্তায় বের হতেন, অথচ আজকে আপনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আপনার ওপর এটা আল্লাহর গজব। তোফায়েল আহমেদের সব অন্যায়েরও বিচার হবে। আপনার শত্রু বিএনপি ও বিজেপি না, আপনার শত্রু এ দেশের মানুষ। আপনার দ্বারা হওয়া সব অন্যায়ের বিচার হবে।

তিনি আরও বলেন, আগামীতে এমন উদাহরণ সৃষ্টি করব, কেউ আর মানুষের ক্ষতি, বাড়ি-গাড়ি লুট, দখলবাজি, চাঁদবাজির করার চিন্তাও কেউ করবে না।

এর আগে, সকালে ঢাকা থেকে লঞ্চযোগে নিজ জেলা ভোলার উদ্দেশে রওনা হন বিজেপি চেয়ারম্যান পার্থ। দুপুরে তিনি ভোলার ইলিশা লঞ্চঘাটে আসলে নেতাকর্মীদের ঢল নামে। পথে পথে অবস্থান নেন নেতাকর্মীরা। পরে লঞ্চঘাট থেকে দলীয় নেতাকর্মীরা বিশাল মোটর শোভাযাত্রার মাধ্যমে জেলা শহরের উকিলপাড়ার বাসভবনে নিয়ে আসেন তাকে। সেখানেই তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন। 

এছাড়া, আরও বক্তব্য রাখেন ভোলা জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বাছেদ, সাধারণ সম্পাদক মোতাছিন বিল্লাহসহ অনেকে। 

মো,খাইরুল ইসলাম/কেএ