মেহেরপুরের গাংনীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় সন্ত্রাস দমন আইনে মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও গাংনী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এমএ খালেকসহ ৩৭ জনের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। 

সোমবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী গাংনী পৌরসভার চৌগাছা গ্রামের জুলফিকার আলীর ছেলে রেজানুল হক ইমন (২৫) বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।

মামলাটি আমলে নিয়ে আদালতের বিচারক মঞ্জুরুল ইমাম গাংনী থানাকে এফআইআরের নির্দেশ দেন।

গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তাজুল ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, আদালতের নির্দেশে মামলাটি এফআইআরভুক্ত করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এই মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে গাংনী বাসস্ট্যান্ড এলাকার তোতা মিয়ার ছেলে ছাত্রলীগ কর্মী তন্ময়কে। এ ছাড়া মামলার অন্য আসামিরা হলেন—মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও গাংনী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ খালেক, গাংনী পৌর মেয়র আহম্মেদ আলী, গাংনী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনারুল ইসলাম বাবু, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোশাররফ হোসেন, গাংনী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কসবা গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে বিপ্লব হোসেন (৩০), সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শিশিরপাড়া গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে জীবন আকবর (৩০), গাংনী সরকারি ডিগ্রি কলেজ শাখার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ধর্মচাকী গ্রামের মৃত ইসমাইলের ছেলে শাহিনুজ্জামান (২৫), চৌগাছা গ্রামের মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে যুবলীগ নেতা মিলন (৪০), জালশুকা গ্রামের জমসেদ আলীর ছেলে ছাত্রলীগ নেতা ওবায়দুল (২৫), চৌগাছা গ্রামের মৃত আজিমের ছেলে রকিব (৩৮), এলাকার ইব্রাহিম জোয়ার্দারের ছেলে হাবিবুর (২৮), শিশিরপাড় খলিলের ছেলে রমজান আলী (৪৫), মৃত মকবুল হোস গাংনী সভ হোসেন, গাংনী পৌরসভার মেয়র আহম্মেদ আলী, মটমুড়া ইউনিয়নের আনোয়ার পাশা, রাইপুরয়ারম্যান গোলাম সাকলায়েন ছেপু, বামন্দী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওবায়দুর রহমান কমল, গাংনী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসিফ ইকবাল অনিক (২২), শিমুলতলা গ্রামের হারান মণ্ডলের ছেলে রাশি (৪০), জোড়পুকুর গ্রামের ফড়ংয়ের ছেলে ইমারুল (৪০), খোকার ছেলে ফয়সাল (৪০), ময়নাল হকের ছেলে খোকন (৪৫), হাবিবুর রহমানের ছেলে হাসান (৩৮), গাংনী পৌরসভার সাবেক মেয়র আশরাফুল ইসলাম (৫০), গাংনী বাজারপাড়া এলাকার হাসেম ফকিরের ছেলে মনি (৪০), হাড়িয়াদহ গ্রামের ইয়ার আলীর ছেলে ও রাইপুর ইউনিয়নের সদস্য (মেম্বার) রাজু আহমেদ (৪০), গাংনী উত্তরপাড়া এলাকার সাবেক ছাত্রলীগের নেতা ও এমপি মকবুল হোসেনের পিএস শাহিদুজ্জামান শিপু (৪০), নওপাড়া গ্রামের কছিমদ্দীনের ছেলে ইয়ারুল ইসলাম (৫০) ও মুকুল হোসেন (৪৫), গাংনী র‌্যাব ক্যাম্পপাড়া এলাকার জালাল উদ্দীনের ছেলে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জুবায়ের হোসেন উজ্জল (৪০), চৌগাছা গ্রামের মৃত জুলহাসের ছেলে উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মজিরুল ইসলাম মিয়া (৫৫), মেহেরপুর ভূমি অফিসপাড়া এলাকার খবির উদ্দীনের ছেলে তুফান (৫২) সদর উপজেলার বুঁড়িপোতা গ্রামের মো. মামুন (৩৮) ও মো. সুমন (৩৫)।

মামলার বাদি রেজানুল হক ইমন বলেন, আদালতে এজাহার দিলে বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে গাংনী থানাকে এফআইআর করার নির্দেশ দিয়েছেন।

জানা গেছে, গত ৩০ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ ঢাকায় আন্দোলন চলাকালীন নিহত ও আহত হওয়ার ঘটনায় উপজেলা শহীদ মিনারে মোমবাতি প্রজ্বলন করতে গেলে আসামিরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়।

আসামিরাসহ অজ্ঞাত আরও ১০০ জন অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী পূর্বপরিকল্পিতভাবে ধারালো রামদা, কিরিচ, লোহার রড, বাঁশের লাঠিসহ এসে ভয়ভীতি, খুন ও জখম করার উদ্দেশ্যে হামলা চালায়। তখন আন্দোলনরত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র ও তাদের অভিভাবক এবং জনসাধারণ ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। এ সময় আসামিদের হামলায় এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করতে থানেক শিক্ষার্থীরা। আসামিদের প্রকাশ্য হুকুমে অন্যান্য আসামিরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে।

আকতারুজ্জামান/এএমকে