দোয়া অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের হয়ে প্রকাশ্যে ভোট চাওয়া, মামলার ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা মডেল মসজিদের ইমাম মামুনুর রশীদের নামে মামলার আবেদন করা হয়েছে।

রোববার (১৮ আগস্ট) রাতে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার উকতো গ্রামের বাসিন্দা মাওলানা আব্দুল আওয়াল বিপ্লবী বাদী হয়ে দামুড়হুদা মডেল থানায় মামলার আবেদনটি করেন।

মামলার আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২৩ সালের ১৫ আগস্ট একটি দোয়া মাহফিলের বক্তব্যে আওয়ামী লীগের হয়ে প্রকাশ্যে ভোট চান দামুড়হুদা মডেল মসজিদের ইমাম মামুনুর রশীদ। তার এই বক্তব্য শুনে আমার পরিচিত সহকর্মী সাইফুল ইসলাম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক অ্যাকাউন্টে সেই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান। প্রতিবাদী সেই পোস্টে আমি সম্মতি জানিয়ে মন্তব্য করায় অভিযুক্ত মামুনুর রশীদ আমাকে এবং আমার পরিবারকে ব্যাপকভাবে হয়রানি করেন। এছাড়াও আমাকেসহ আমার পরিবারকে মামলার হুমকি দিয়ে দামুড়হুদা থানায় মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমার সহকর্মী মো. সাইফুল ইসলাম, সালমান সাদি ও তাদের পরিবারকে বিভিন্ন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর মাধ্যমে ভয়-ভীতি দেখিয়ে প্রাণনাশের হুমকিসহ মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন ওই ইমাম। এছাড়াও তিনি ওই বক্তব্যের মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানেন এবং আমরা অভিযুক্তের এমন বক্তব্যের প্রতিবাদ করায় আমাদের নামে রাষ্ট্রবিরোধী মামলা করারও হুমকি দেওয়া হয়। বিষয়টি কেন্দ্র করে তিনি আমার ওপর চড়াও হন এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। আমি তাকে গালাগালি করতে নিষেধ করলে অভিযুক্ত ওই ইমাম আমার ওপর মারমুখী আচরণ করেন এবং বিভিন্ন ধরনের ভয়-ভীতি দেন।

মাওলানা আব্দুল আউয়াল বিপ্লবী বলেন, দামুড়হুদা মডেল মসজিদের ইমাম মামুনুর রশীদ গত বছরের ১৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের এক দোয়া অনুষ্ঠানের বক্তব্যে তাদের হয়ে প্রকাশ্যে ভোট চান। ওই বক্তব্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ইসলামের সরকার বলেও দাবি করেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ওই বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন সম্মিলিত উলামা কল্যাণ পরিষদের মিডিয়া বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা সাইফুল ইসলাম। আমি সেই প্রতিবাদী পোস্টে সম্মতি জানিয়ে মন্তব্য করায় মামুনুর রশীদ আমাকে এবং আমার পরিবারকে ব্যাপকভাবে হয়রানি করেন। এছাড়াও আমাদের পরিবারকে মামলার হুমকি দিয়ে দামুড়হুদা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) সমীর চন্দ্র দাসের মাধ্যমে আমার কাছ থেকে জোরপূর্বক ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে মামলার হুমকি দেওয়ায় আমি ৫০ হাজার টাকা দিতে বাধ্য হই। টাকা দেওয়ার পর মডেল মসজিদের ইমাম মামুনুর রশীদের কাছে ক্ষমা চাইতেও বাধ্য করে পুলিশ।

সম্মিলিত উলামা কল্যাণ পরিষদের মিডিয়া বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা সাইফুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে আমি ফেসবুকে প্রতিবাদ জানালে আমাকে এবং আমার পরিবারকে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশ দিয়ে নানানভাবে হয়রানি করা হয়। বাড়িতে পুলিশ এসে আমাকে না পেলে আমার মাকে তুলে নেওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়। এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদে অসংখ্য আলেম উলামা ফেসবুকে এবং বিবৃতির মাধ্যমেও নিন্দা জানান।

তিনি আরও বলেন, মামুনুর রশীদ শুধু আমাদের হয়রানি করেছেন তা-ই নয় বরং সেই বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারকে ইসলামের সরকার বলে চরমভাবে ধর্মীয় অনুভূতিতেও আঘাত হানেন। আমরা আলেম সমাজ তার বিচার চাই।

দামুড়হুদা মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (অপারেশন) হিমেল রানা বলেন, এক বছর আগের ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।

আফজালুল হক/এফআরএস