নিরবচ্ছিন্ন গ্যাসের দাবিতে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন অফিস ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেছেন মানিকগঞ্জের ছাত্র-জনতা ও ভুক্তভোগীরা। সোমবার (১৯ আগস্ট) বেলা ১১টায় সদর উপজেলার জাগির এলাকায় অর্ধশতাধিক ছাত্র-জনতা ও ভুক্তভোগীরা আঞ্চলিক গ্যাস অফিস কার্যালয়ে যান।

এ সময় তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন আঞ্চলিক বিক্রয় বিভাগ মানিকগঞ্জের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আলীর অফিস কক্ষে প্রবেশ করে উপস্থিত ছাত্র-জনতা জানতে চান গত ১৫ বছরের অধিক সময় ধরে মানিকগঞ্জ জেলায় আবাসিক লাইনে রান্নার গ্যাস না দিয়ে জোরপূর্বক বিল নেওয়া হচ্ছে কেন।

ছাত্র-জনতার পক্ষে আল আমীন আহমেদ রোহেল অভিযোগ করে বলেন, আমরা মানিকগঞ্জ পৌরবাসী গত ১৫ বছর ধরে নিয়মিত বিল পরিশোধ করেও আবাসিক লাইনে গ্যাস সরবরাহ পাচ্ছি না। এই বিষয়টির একটি সুরাহ হওয়া প্রয়োজন। সেই জন্য আমরা সাধারণ ছাত্র-জনতা গ্যাস অফিসে এসে এখানকার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা তাদের সাত দিনের সময় বেঁধে দিয়েছি। আগামী সাত দিনের মধ্যে যদি গ্যাস না পাই তাহলে গ্যাসের দাবিতে মহাসড়কে নামতে বাধ্য হব।

ভুক্তভোগীরা বলেন, তিতাস গ্যাস কোম্পানি আবাসিক লাইনে গ্যাস না দিলেও গ্যাস অফিসের অসাধু কিছু কর্মকর্তা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অবৈধ অর্থ গ্রহণের বিনিময়ে গ্যাস দিচ্ছেন। সপ্তাহে এক দিন শুক্রবার নামেমাত্র আবাসিক লাইনে গ্যাস দেওয়া হয়। কিন্তু সেটাও পর্যাপ্ত নয়।

তবে অবৈধ অর্থ গ্রহণের অভিযোগ অস্বীকার করে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন আঞ্চলিক বিক্রয় বিভাগ মানিকগঞ্জের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আলী বলেন, আমাদের নেটওয়ার্কে যতটুকু গ্যাস সরবরাহ থাকে তা আমরা বিপণন করি। ছাত্র-জনতার দাবি আমাদের অফিস থেকে পূরণ করা সম্ভব না জানিয়ে সমস্যা সমাধানের জন্য ছাত্র-জনতার দাবিগুলো আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানাব।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মানিকগঞ্জ জেলা শাখার অন্যতম সমন্বয়ক রমজান মাহমুদ বলেন, মানিকগঞ্জবাসী দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস পাচ্ছে না, অথচ প্রতি মাসেই বিল দিতে হচ্ছে। গ্যাস সংকটের সমস্যা সমাধানে আমরা চার দফা দাবি নিয়ে তিতাস গ্যাস অফিসে জড়ো হয়েছি। সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষকে সাত দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান না হলে পরবর্তীতে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

চার দফা দাবিগুলো হলো- আবাসিক এলাকায় কেন গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না তা সমাধান করা; পৌরসভাসহ মানিকগঞ্জে যতগুলো আবাসিক গ্যাস লাইন আছে তা সাত দিনের মধ্যে সচল করতে হবে; আবাসিক এলাকায় পরিপূর্ণ গ্যাস না দেওয়া পর্যন্ত বিল নেওয়া থেকে বিরত থাকা এবং যাদের গ্যাস বিল বাকি আছে এবং যারা এরই মধ্যে ব্যবহার না করে পরিশোধ করেছেন সেগুলো পর্যায়ক্রমে গ্যাস বিল সমন্বয় করতে হবে। এই দাবিগুলো আগামী সাত দিনের মধ্যে না মানলে মহাসড়ক অবরোধ করার হুমকি দেওয়া হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন আল আমীন আহমেদ রোহেল, রাকিবুল ইসলাম সজল, রমজান মাহামুদ, খাইরুল ইসলাম রবিন, আব্দুল কাউয়ুম, আব্দুল্লাহ আল মামুন, সবুজ আহমেদ শরিফুল ইসলাম, মাহবুবুর রহমান, জোবায়ের আহমেদ জুয়েল, তাঞ্জিল শেখ প্রমুখ।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড মানিকগঞ্জ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মানিকগঞ্জ জেলায় মিটারবিহীন আবাসিক গ্রাহকসংখ্যা প্রায় ১২ হাজার। মিটারযুক্ত আবাসিক গ্রাহকসংখ্যা প্রায় ৪০। এসব গ্রাহকদের কাছ থেকে গ্যাস না দিয়ে প্রতিমাসে ২ কোটি ২০ লাখ টাকার মতো বিল আদায় করা হয়। তবে নানা কারণে মাত্র ১০ শতাংশ গ্রাহক বিল জমা দেন বলে কার্যালয় সূত্রে জানানো হয়েছে।

সোহেল হোসেন/এমজেইউ