আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী দেখতে পেলেই গণধোলাই দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বরিশালের বাকেরগঞ্জ পৌর বিএনপির আহ্বায়ক নাসিরউদ্দিন জমাদ্দার। কেন্দ্র নির্ধারিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত সমাবেশে শনিবার (১৭ আগস্ট) বিকেলে তিনি এই ঘোষণা দেন। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ফুটেজ প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে।

নাসির উদ্দিন জমাদ্দার বলেন, ‘আজ (শনিবার) থেকে মাঠে-ঘাটে ডাইনি হাসিনার লোকজন যেখানে পাবে গণধোলাই হবে। আওয়ামী লীগের কোনো লোক যদি রাস্তায় ওঠে তাদের গণধোলাই দিয়ে থানায় দিয়ে দেবে।’

বাকেরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন ডাকুয়াকে উদ্দেশ্য করে বিএনপি নেতা নাসিরউদ্দিন জমাদ্দার বলেন, ‘লোকমান তুই আমাকে চিন নাই, আমি নাসির জমাদ্দার। বাকেরগঞ্জে তুই ছোট মুখে অনেক কথা বলেছ। আজকে যদি ইচ্ছা থাকতো তোর বাড়িঘর লুট করাইতে পারতাম। আমাদের নেতা আবুল হোসেন খান (দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক) শান্তি প্রিয় নেতা। তিনি কোনো সন্ত্রাস করতে না করেছেন, বাড়িঘরে হামলা করতে না করেছেন।’

নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমার সকল নেতাকর্মীদের প্রতি আমার নির্দেশ, আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মী—যারা ১৫ আগস্ট পালন করতে গিয়েছে, তাদের যেটাকে রাস্তায় পাবে তাকে গণধোলাই হবে। শেখ হাসিনা পালিয়েছে, আওয়ামী লীগের নাম কেউ নেয় না, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ থাকবে না। অথচ যদি মনে করো (আ. লীগের নেতাকর্মী) আবার রাস্তাঘাটে উঠবা, রং-তামাশা করবা, তাহলে বাকেরগঞ্জে কবর হবে সন্ত্রাসীদের। আওয়ামী লীগের যারে যেখানে পাবি সেইখানে গণধোলাই দিয়া আমারে খবর দিবি।’ এ সময় আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে উল্লেখ করে তাদের নিবন্ধন বাতিলেরও দাবি জানান এই বিএনপি নেতা।

এদিন বাকেরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে অনুষ্ঠিত জনসভায় উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

বক্তব্যের সত্যতা স্বীকার করে নাসির উদ্দিন জমাদ্দার বলেন, ‘গণধোলাই দেওয়ার যে বক্তব্য সেটি আমার। শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও বাকেরগঞ্জে এখনো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা বলে। বিগত ১৭ বছর অনেক নিপীড়ন করেছে। ওই বক্তব্য দিয়েছি সেই কষ্টে।’

এ বিষয়ে দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হোসেন খান বলেন, ‘সন্ত্রাস উসকে দেয় এমন বক্তব্য কারো দেওয়া উচিত নয়। আমি এখনো শুনিনি নাসির কি বলেছে। তবে অন্য যে দলই হোক তাদের নিয়ে আইন হাতে তুলে নেওয়ার মতো কথা বলা ঠিক না। আমি তাকে সতর্ক করে দেব।’

এর আগে, বেলা ১১টার দিকে পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লোকমান ডাকুয়াকে গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ করে বিএনপি। মিছিল শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ওসির কাছে গ্রেফতারের জন্য ২৪ ঘণ্টার জন্য সময় বেধে দেন।

উল্লেখ্য, গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন এলাকায় দখল এবং হামলা-মারধরের অভিযোগ উঠেছে বিএনপির নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। পুকুর দখলের অভিযোগে সর্বশেষ কেন্দ্রীয় বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিনের সকল পদ স্থগিত করে বিএনপি। 

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এএমকে