মাগুরার মহম্মদপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে কলেজছাত্র সুমন শেখ (১৮) নিহতের ঘটনায় ১৭২ জনের নামে মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) বিকেলে মহম্মদপুর থানায় নিহত সুমন শেখের বাবা কান্নুর রহমান বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।

জানা গেছে, মাগুরা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বীরেন শিকদার, তার ভাই বিমল শিকদার, মহম্মদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল সিদ্দিকী লিটনসহ দলীয় ১৭২ নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে বলে যুক্ত বলে জানা গেছে। 

নিহত সুমন শেখ মহম্মদপুর বিএম টেকনিক্যাল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। মামলায় মাগুরা-২ আসনের সাবেক এমপি বীরেন শিকদারের বিরুদ্ধে সুমন শেখকে হত্যার হুকুম ও মদদ দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বাদী কান্নুর রহমান উল্লেখ করেন, তার ছেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছিলেন। মাগুরা-২ আসনের সাবেক এমপি বীরেন শিকদার, তার ভাই বিমল শিকদারের হুকুম ও মদদে গত ৪ আগস্ট সকালে তাদের বাড়িতে গিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হুমকি দিয়ে আসেন। পরে সুমন শেখসহ অন্যরা মিছিল নিয়ে মহম্মদপুর থানা এলাকায় যেতে চাইলে আসামিরা তাদের ওপর হামলা চালান। প্রথমে রাস্তায় ফেলে আসামিরা সুমন শেখকে লোহার রড দিয়ে আঘাত করেন। একই সময় বালিদিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম তার হাতে থাকা রিভলভার দিয়ে সুমন শেখের বাম পাঁজরে গুলি করেন। 

তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে ময়নাতদন্ত ছাড়াই নিজ গ্রামে তার লাশ দাফন করা হয়। 

মহম্মদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান বলেন, সত্যকে আড়াল করে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিএনপির নেতারা আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছেন। তারা (বিএনপি নেতাকর্মীরা) থানা আক্রমণ করতে গেলে গুলিতে দু’জন নিহত হন। এর অন্তত এক ঘণ্টা আগে আমাদের নেতাকর্মীরা মাঠ ছেড়ে দিয়ে জীবন বাঁচাতে নিরাপদে আশ্রয় নেন। থানা এলাকায় ওই সময় আমাদের কোনো নেতাকর্মী ছিলেন না। এমন মিথ্যা মামলা পুলিশ কীভাবে নিল?

মহম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ঠাকুর দাস মণ্ডল বলেন, কয়েক হাজার মানুষ মিছিল নিয়ে থানায় হামলা চালাতে এসেছিল। পথে দুই পক্ষের (বিএনপি ও আওয়ামী লীগ) মধ্যে সংঘর্ষ হয়। তখন আমরা থানার নিরাপত্তা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। থানার অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুটের আশঙ্কা ছিল। আমরা পরে খবর পাই যে দু’জন মারা গেছে। ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবার মরদেহ দু’টি দাফন করে। তদন্তে সবকিছু বেরিয়ে আসবে বলে আশা করি।

তাছিন জামান/কেএ