জামালপুরে সাত মাস ধরে বন্ধ যমুনা সার কারখানা
দৈনিক ১ হাজার ৭শ মেট্রিক টন দানাদার ইউরিয়া সার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান জামালপুরের যমুনা সার কারখানা গ্যাস সংকটের কারণে সাত মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে কারখানাটির সঙ্গে জড়িত তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার শ্রমিক কর্মহীন হয়ে অতি কষ্টে দিন পার করছেন। অন্যদিকে ব্যবহার না হওয়ার কারণে কারখানার মূল্যবান যন্ত্রাংশগুলোও নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
কারখানা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারির ১৫ তারিখের দিকে গ্যাস সংকটের কারণে যমুনা সার কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। কারখানাটি বন্ধ হওয়ার কারণে জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার তারাকান্দি এলাকায় কারখানাটির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় চার হাজার মানুষ কর্মহীন হয়ে বেকার অবস্থায় রয়েছে। কারখানার আশেপাশে শত শত ট্রাক দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে।
বিজ্ঞাপন
গুণগত দিক থেকে যমুনা সার কারখানায় উৎপাদিত দানাদার ইউরিয়া সার ফসলের জন্য অনেক ভালো হওয়ায় কৃষকদের কাছে এর চাহিদাও ব্যাপক। বন্ধ কারখানাটি দ্রুত চালু না হলে আসন্ন আমন মৌসুমে সার সংকটের আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। আবার কারখানাটি বন্ধ থাকলে দানাদার ইউরিয়া সারের দাম আরও বাড়তে পারে বলে মনে করেছেন সার সরবরাহকারী কৃষকরা ও ডিলাররা।
কারখানা বন্ধ হওয়ায় স্থানীয় বাজারগুলোতেও এর প্রভাব পড়েছে। সেখানে নেই ক্রেতা-বিক্রেতা এবং কর্মচাঞ্চল্য পরিবেশ। বিভিন্ন জায়গায় বসে অলস সময় পার করছেন কারখানার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন পেশার মানুষ। ক্রেতার অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে অনেক ছোট ও মাঝারি দোকান ও খাবারের হোটেল।
সার পরিবহনকারী ট্রাকচালক ও হেলপাররা জানান, অনেক দিন ধরে কারখানা বন্ধ থাকার কারণে আমাদের আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। ঋণ করে সংসার চালাতে হচ্ছে। আমার মতো আরও অনেক ড্রাইভার-হেলপার এখন প্রায় না খেয়ে দিন পার করছে। গ্যাস সংযোগ দিয়ে দ্রুত সার কারখানা চালুর দাবিও জানান তিনি।
প্রতিদিন ১ হাজার ৭শ মেট্রিক টন উৎপাদন সক্ষমতা নিয়ে ১৯৯১ সালে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রা শুরু করে দেশের অন্যতম দানাদার ইউরিয়া সার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান যমুনা সার কারখানা। তবে গ্যাসের কম চাপ ও বিভিন্ন সমস্যার জন্য ১ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন ইউরিয়া উৎপাদন করে আসছিলো কারখানাটি। দীর্ঘদিন কারখানাটি বন্ধ থাকার কারণে কারখানার অতিমূল্যবান যন্ত্রাংশগুলোও পুরোপুরি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে হাজার কোটি টাকা ক্ষতির শঙ্কাও করছেন কর্তৃপক্ষ।
জামালপুর, শেরপুর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলের ২১টি জেলার ১৬২টি উপজেলায় বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) প্রায় ১ হাজার ৯শ ডিলারের মাধ্যমে কৃষকদের কাছে সার সরবরাহ করে থাকে যমুনা সার কারখানা।
যমুনা সার কারখানার সিবিএ (কালেকটিভ বার্গেনিং এজেন্ট) সভাপতি রবিউল ইসলাম বলেন, কারখানা বন্ধ থাকার কারণে কারখানা-সম্পৃক্ত যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে—ট্রাক, ট্যাংক লড়ি, কাভার্ড ভ্যান সমিতি এবং হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে গেছে। পাশাপাশি কারখানার শ্রমিক, কর্মচারীরা কারখানা চালু নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। চার মাস যদি চলে তাহলে আমাদের শ্রমিক, কর্মচারীদের বেতন-ভাতার কোনো সমস্যা হবে না। যমুনা সার কারখানায় এক টন ইউরিয়া সার উৎপাদন করতে খরচ পড়ে ১৮-২০ হাজার টাকা। আর দেশের বাইরে থেকে সার আমদানি করতে খরচ পড়ে টনপ্রতি প্রায় এক লাখ টাকা। কারখানা যদি কয়েক মাসের মধ্যে চালু না হয় তাহলে সরকারকে হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে বলে জানান সিবিএ সভাপতি।
তারাকান্দি ট্রাক ও ট্যাংক লড়ি মালিক সমিতির সভাপতি ও সরিষাবাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, এই কারখানার শ্রমিক, ব্যাগিং, লোডিং, ম্যান পাওয়ার ও ট্রাকের সঙ্গে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার শ্রমিক জড়িত। সবাই বেকার অবস্থায় জীবনযাপন করছে। এই সার কারখানাটি যদি অতিদ্রুত চালু করা না হয় তাহলে এখানে যে যন্ত্রাংশগুলো আছে এগুলো ধীরে ধীরে অকেজো হয়ে যাবে, পরবর্তীতে এই কারখানাটি অন্যান্য ফ্যাক্টরিগুলো যেভাবে বন্ধ করে অকেজো করা হয়েছে সেভাবে এই কারখানাও আর চালু করা যাবে না বলে জেনেছি। সরকারের কাছে গ্যাস সংযোগ দিয়ে অতিদ্রুত কারখানাটি চালুর দাবি জানান তিনি।
যমুনা সার কারখানার উপপ্রধান প্রকৌশলী (রসায়ন) মো. ফজলুল হক জানান, গত জানুয়ারির ১৫ তারিখ থেকে গ্যাস না থাকার কারণে কারখানাটি হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায়। এখনো পর্যন্ত চালু করতে পারিনি। কবে গ্যাস পাবো, এই বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো দিক নির্দেশনা নাই, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে ভালো জানেন। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলে প্লান্ট প্রিজারভেশন করা কঠিন হয়ে যায়। যদি প্রিজারভেশন করতে ব্যর্থ হই সেক্ষেত্রে অনেক যন্ত্রাংশ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
মুত্তাছিম বিল্লাহ/এএমকে