ফেনীর মহিপালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের নির্বিচারে গুলিতে নিহতের ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলায় ফেনী-২ আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী, তিনজন উপজেলা চেয়ারম্যান, দুইজন মেয়র, ১৩ জন ইউপি চেয়ারম্যান, ১১ জন পৌর কাউন্সিলরসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে।

সোমবার (১২ আগস্ট) দিবাগত রাতে মহিপালে নিহত অটোরিকশাচালক মো. সবুজের ভাই মো. ইউসুফ বাদী হয়ে ৬৫ জনের নাম উল্লেখ ও আরও ৪০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে ফেনী মডেল থানায় এ হত্যা মামলা দায়ের করেন। ছাত্রদের দিকে গুলি করার নির্দেশনা ও অস্ত্র সরবরাহের অভিযোগে নিজাম হাজারীকে মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে ফেনী মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, এ মামলায় পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। এতে নিজাম উদ্দিন হাজারীর পিএস মো. ফরিদ মানিককে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ৪ আগস্ট মহিপালে ছাত্র-জনতার কর্মসূচিতে অটোরিকশাচালক সবুজ অংশ নেন। ওইদিন দুপুর ২টার দিকে ট্রাংক রোড থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গুলিবর্ষণ শুরু করলে সবুজ সার্কিট হাউস রোডের দিকে চলে যান। সেখানে স্বপন মিয়াজী, জানে আলম, মাহবুবুল হক লিটন ও অর্ণবের গুলিতে সবুজ লুটিয়ে পড়লে অন্য আসামিরা তাকে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে সবুজের মরদেহ ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে পুনরায় হামলার আশঙ্কায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই তার মরদেহ লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার টুমচর গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দাফন করা হয়।

এর আগে ৪ আগস্ট অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর মহিপাল এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছিলেন আন্দোলনকারীরা। একইসময়ে শহরের ট্রাংক রোডে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। দুপুর দুইটার দিকে মিছিল নিয়ে আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মহিপাল ফ্লাইওভারের দিকে এগোতে থাকলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। এ সময় মুহুর্মুহু গুলি, ককটেল বিস্ফোরণে চারপাশ প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। বিকেল ৫টা পর্যন্ত থেমে থেমে সেখানে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। সংঘর্ষের একপর্যায়ে মহিপালের পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হওয়া ছাড়াও ইটপাটকেলের আঘাতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, পথচারী ও সাংবাদিকসহ আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৯ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।

মামলায় আসামি হলেন যারা

মামলায় ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী, ফেনী সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীল, ফেনী পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান করিম উল্লাহ বিকম প্রকাশ রেন্সু করিম, যুবলীগ নেতা জিয়া উদ্দিন বাবলু, শর্শদি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি জানে আলম, ধলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার আহম্মদ মুন্সী, ফেনী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কোহিনূর আলম রানা, জেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরীফ হাজারী, পৌর আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল জলিল আদর, সাইফুল ইসলাম পিটু, ফেনী পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক আশরাফুল ইসলাম মোহন প্রকাশ কালা মোহন, যুবলীগ নেতা শহিদুল ইসলাম সোহেল প্রকাশ কালা সোহেল, ফাজিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুল হক রিপন, পাঁচগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক লিটন, ফেনী পৌর ১৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আমির হোসেন বাহার, ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর লুৎফুর রহমান খোকন হাজারী, দাগনভূঞা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সভাপতি দিদারুল কবির রতন, সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি নুরুল আবছার আপন, ফেনী পৌর ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বাহার উদ্দিন বাহার, ফেনী পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন বাবলু, ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন মজুমদার, যুবলীগ নেতা রেজাউল করিম নাদিম, ফেনী পৌর ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল কালাম প্রকাশ গরু কালাম, ছাগলনাইয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুর রশীদ মিলন প্রকাশ পিএস মিলন, পৌর কাউন্সিলর সাহাব উদ্দিন, জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি জিয়াউল আলম মিষ্টার, পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত রাজু, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তোফায়েল আহমেদ তপু, সাধারণ সম্পাদক নুর করিম জাবেদ, পৌর কাউন্সিলর জয়নাল আবেদীন লিটন হাজারী, নিজাম হাজারীর কথিত পিএস মো. ফরিদ মানিক, পৌর কাউন্সিলর রুবেল চৌধুরী, সোনাগাজীর মঙ্গলকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন বাদল, ধর্মপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সাকা, মাতুভূঞা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মামুন, কাজীরবাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী বুলবুল আহমেদ সোহাগ, লেমুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ উদ্দিন নাসিম, কালিদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ডালিম, পৌর কাউন্সিলর আশরাফুল আলম গিটার, মোটবী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশীদ প্রকাশ উট হারুন, পৌর কাউন্সিলর হারুনুর রশীদ মজুমদার এবং পরশুরাম পৌরসভার মেয়র নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী সাজেলসহ ৬৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

তারেক চৌধুরী/এমজেইউ