বিয়ের ১০ বছর পর বাবা-মায়ের কোলজুড়ে আসে মো. বেলাল হোসেন রাব্বি। দীর্ঘদিন পর সন্তান পেয়ে খুশি হয়েছিলেন বাবা-মা। তারপর আসে দুই বোন। বাবার মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরতে পড়ালেখার পাশাপাশি চাকরি নিয়েছিলেন লিফটম্যানের। আইএলটিএস করে বিদেশ পাড়ি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না রাব্বির। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিয়ে গুলিবিদ্ধ হওয়ার ৫ দিন পর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন বেলাল হোসেন রাব্বি। বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। 

বেলাল হোসেন রাব্বি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডর হাজী আবদুর মিয়ার বাড়ির মৃত কবির হোসেন মিয়ার একমাত্র ছেলে।

এলাকাবাসী জানায়, পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতা আনতে ঢাকার মিরপুর বাংলা কলেজে ভর্তি হয়ে মালিবাগে একটা মার্কেটের লিফটম্যানের কাজ করতো বেলাল হোসেন রাব্বি। ডিউটি শেষে কোটাবিরোধী আন্দোলনের মিছিলে অংশ নেন। গত ৪ আগস্ট (রোববার) গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিলেন। বৃহস্পতিবার তার মৃত্যু হয়। তার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। মরদেহ নিয়ে আসার পর শোকের ছায়া নেমে এসেছে পরিবার জুড়ে। 

নিহতের বোন পুতুল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের বাবা নাই। এই ভাই আমাদের পরিবারের খরচ চালাতো। সে পড়াশোনার পাশাপাশি লিফটম্যানের চাকরি করতো। তার বিদেশ যাওয়ার কথা ছিল। সেই বিদেশ আর যাওয়া হলো না। আমার মা আর ছেলেকে বুকে নিতে পারবে না। আমরা আর ভাই ডাকতে পারব না। 

স্থানীয় বাসিন্দা জাহান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এতো হাসিখুশি আর ভালো ছিল ছেলেটা। ছোট দুই বোন আর সে ছিল তার মায়ের বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা। মহান আল্লাহর পরে বাবাহারা ছেলেটাই ছিল পরিবারের একমাত্র ভরসা। আল্লাহ কত পরিবার যে এভাবে নিঃস্ব হয়ে গেল। হাসিটা তার মুখে লেগেই থাকতো সারাক্ষণ। আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন। 

বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বেলাল হোসেন রাব্বি গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন বলে সংবাদ পেয়েছি। তার পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে। রাত ১০টায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। আমি তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। 

হাসিব আল আমিন/আরএআর