নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেলেই মাঠে নামবে বরিশালের পুলিশ
পুলিশ সদস্য হত্যা, নির্বিচারে হামলার বিচারসহ বিভিন্ন দাবিতে কর্মবিরতির ডাক দেওয়া সদস্যরা কাজে ফিরবেন। নিরাপদ কর্মপরিবেশ, পুলিশ বিধানের বাইরে ব্যক্তি প্রয়োজনে ব্যবহার না করার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশ্বাসের অপেক্ষায় রয়েছেন তারা। বরিশাল রেঞ্জ ও মেট্রোপলিটন পুলিশ সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। তাছাড়া আন্দোলন পরবর্তী সকল সদস্য স্ব-স্ব থানা ও কর্মস্থলে থাকায় না ফেরার শঙ্কা করছেন না দায়িত্বশীলরা।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) পুলিশের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে এই তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞাপন
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে দমন করতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগে বাধ্য করে পুলিশকে। আন্দোলন দমাতে বিভিন্ন স্থানে গুলি করে কয়েকশ মানুষ হত্যা, কয়েক হাজার গ্রেপ্তার, মারধর চালায় পুলিশ। প্রবল আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা পালালে সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়। শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার পর সামনে আসে পুলিশের পেশাদারিত্ব ও আচরণ নিয়ে। আন্দোলনকারীদের রোষের কেন্দ্রে পরিণত হয় পুলিশ। বিভিন্ন স্থানে হত্যা ও মারধর শুরু হয়। এই অবস্থায় কর্মবিরতির ডাক দেয় পুলিশ সদস্যরা। এমনকি কর্মস্থল ছেড়ে আত্মগোপনে যায় অনেকে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের এক উপ-পুলিশ পরিদর্শক ঢাকা পোস্টকে বলেন, বরিশালে থাকলেও আমরা অনেকেই পালিয়ে বেড়াচ্ছি। ছাত্রদের সঙ্গে আমাদের কোনো বিরোধ না থাকলেও সরকারের আদেশ বাস্তবায়ন করতে হয়েছে। এখন আমাদের অপরাধীর চোখে দেখে মানুষ। এই অবস্থান থেকে পুনর্গঠন না করা হলে মানুষের চক্ষুশূল থেকেই যাব আমরা।
আরেকজন পরিদর্শক বলেন, সরকার তারমতো সরে গেছে, জনগণ জয়ী হয়েছে। মাঝখান দিয়ে আমরা ছাত্র-জনতার কাছে ভিলেন হয়ে গেলাম। আতঙ্কে থাকি কখন কোথায় হামলা হয়। ক্ষুব্ধ মানুষ আমাদের মেরে ফেলে কিনা।
এদিকে বুধবার (৭ আগস্ট) বরিশাল জেলা পুলিশ লাইনসে এবং ১০ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা সংবাদ সম্মেলন করে কর্মবিরতি ও তাদের দাবি তুলে ধরেন। এর আগের দিন মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) পটুয়াখালীতে বিক্ষোভ করে জেলা পুলিশ সদস্যরা। বাহিনীর অভ্যন্তরে অসন্তোষ নিরসনে দ্রুত উদ্যোগ নিয়ে জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আন্দোলনরতদের সঙ্গে কথা বলেন। এদিকে পুলিশ হেডকোয়াটার্স থেকে আজ (৮ আগস্ট) সন্ধ্যার মধ্যে সকল পুলিশ সদস্যকে কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ঝালকাঠি পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আফরুজুল হক টুটুল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের পুলিশ সদস্যরা সকলেই ঝালকাঠিতে আছেন। আজকে সন্ধ্যায় সকলের সঙ্গে কথা বলব। আশা করছি আগামীকাল থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা মাঠে নামব।
বরগুনা জেলা পুলিশ সুপার রাফিউল আলম বলেন, একটি শঙ্কার মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি। কাজে যোগ দেওয়ার বিষয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টারের নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছি।
১০ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান (এপিবিএন) বরিশালের অধিনায়ক মোল্লা আজাদ হোসেন বলেন, এপিবিএনের সকল পুলিশ সদস্য কেউ বাড়িতে বা অন্য কোথাও যায়নি। তারা নির্দেশনা মোতাবেক কাজে যোগ দেবেন। তাছাড়া নতুন সরকার গঠন হচ্ছে। আশা করছি পরিস্থিতি সকলের সহায়তায় দ্রুত উন্নত হবে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার জিহাদুল কবিরকে মুঠোফোনে না পাওয়া গেলেও ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শঙ্কা থাকলেও মেট্রোপুলিশ নির্ধারিত সময়ে কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বরিশালে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর আক্রমণাত্মক ছিল না। যে কারণে বিশেষ সমস্যা হবে না। সকল সদস্যই তাদের থানাসহ কর্মস্থলে আছে। নির্দেশনা পেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নেমে পড়বে।
বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি মো. ইলিয়াছ শরীফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, পুলিশ নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছে। এ বিষয়ে গতকাল আইজিপি মহোদয় নির্দেশনা দিয়েছেন এবং পুলিশের হারানো মনোবল ফিরিয়ে আনতে কাজ চলছে। নির্দেশনা মোতাবেক পুলিশ দ্রুতই কাজ ফিরবে।
এদিকে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, স্থানীয় প্রশাসন সক্রিয় ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় জেলা-উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা সভা করার উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে বৈঠক করে স্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরিতে কাজ শুরু করেছে।
বরিশালের জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমরা ইতোমধ্যে সকলকে নিয়ে বসেছি। সুশীল সমাজ, রাজনীতিবিদ, আইনজীবী, সাংবাদিকসহ সকল শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। সকলেই আশ্বস্ত করেছেন, আইনশৃঙ্খলা সমুন্নত রাখতে সবাই একযোগে কাজ করবেন।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/এমজেইউ