ফেনীতে ছাত্র আন্দোলনে গুলি, নিহতের সংখ্যা নিয়ে ধোঁয়াশা
ফেনীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায়ের কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গুলি ও হামলায় নিহতের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। গত রোববার (৪ আগস্ট) শহরের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর মহিপালে গোলাগুলির ঘটনায় কতজন প্রাণ হারিয়েছেন, এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য মেলেনি। গুলিতে নিহতের সংখ্যা নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে নানা আলোচনা চলছে। কেউ বলছেন ঘটনায় ১১ জন, কারও মতে ১৭ জন। তবে নিহতের ব্যাপারে ফেনী জেনারেল হাসপাতাল থেকে ৮ জনের প্রাণহানির তথ্য পাওয়া গেছে।
সেদিনের আন্দোলনে অংশ নেওয়া বিভিন্ন শিক্ষার্থীর দেওয়া তথ্যমতে, নিহতের সংখ্যা অনেক বেশি। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, পথচারী ও সাংবাদিকসহ আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক ব্যক্তি।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সরকার পতনের এক দফা কর্মসূচির সমর্থনে মহিপালে ছাত্র-জনতার অবস্থান কর্মসূচিতে নির্বিচারে গুলির ঘটনায় নিহতের সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন তথ্য এসেছে নানা সূত্র থেকে। তবে পুলিশ কিংবা সরকারি কোনও সংস্থার পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনও বক্তব্য মেলেনি।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে ৮ জনের তথ্য নিশ্চিত করলেও অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ৯ জন, ১১ জন, ১৩ জন, ১৭ জন, ২১ জন, আবার কেউ কেউ ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করছেন। তবে সব হাসপাতাল এবং এলাকার তথ্য সংগ্রহ করা যায়নি।
আরও পড়ুন
ফেনী জেনারেল হাসপাতাল থেকে প্রাপ্ত তথ্যে ওই দিন গোলাগুলিতে মৃত্যু হয়েছে, ফেনী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সদর উপজেলার বারাহীপুর এলাকার ইশতিয়াক আহমেদ শ্রাবণ, সদর উপজেলার ফাজিলপুর কলাতলী গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে ছাইদুল ইসলাম (২০), পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ কাশিমপুর এলাকার সিরাজুল ইসলামের ছেলে শিহাব উদ্দিন (২১), সোনাগাজীর চর মজলিশপুর মান্দারি গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে সাকিব (২২), আরাফাত, দাগনভূঞা উপজেলার উত্তর জয়লস্কর এলাকার মো. শাহজাহানের ছেলে ফার্ণিচার ব্যবসায়ী সরোয়ার জাহান মাসুদ (২১) এবং লক্ষ্মীপুরের মালেকের ছেলে অটোরিকশা চালক সাইফুলের।
সেদিনের ব্যাপারে জানতে চাইলে অর্ণব নামে এক শিক্ষার্থী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে গুলি করেছে। এতে নিহতের সংখ্যা নিয়ে নানা মত রয়েছে। তবে মৃত্যুর সংখ্যা ৮ জনের চেয়ে বেশি হবে। অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
জোবায়ের নামে আন্দোলনকারী আরেক শিক্ষার্থী বলেন, সরকার পতনের মতো দাবি আমাদের কখনোই ছিল না। শুধু শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে কোটা সংস্কার চেয়েছি। কিন্তু সেখানে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে তারা।
এ ব্যাপারে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. আসিফ ইকবাল বলেন, হাসপাতালে ৮ জনের মৃত্যুর তথ্য রয়েছে। তারমধ্যে একজনের মরদেহ স্বজনরা তাৎক্ষণিকভাবে নিয়ে যাওয়ায় তার নাম-পরিচয় মেলেনি।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলেও পুলিশ কর্মকর্তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এর আগে গত ৪ আগস্ট অসহযোগের সমর্থনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর মহিপাল এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছিল আন্দোলনকারীরা। একইসময়ে শহরের ট্রাংক রোডে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
দুপুর দুইটার দিকে মিছিল নিয়ে আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মহিপাল ফ্লাইওভারের দিকে এগোতে থাকলে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে।
এ সময় মুহুর্মুহু গুলি, ককটেল বিস্ফোরণে চারপাশ প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। বিকেল ৫টা পর্যন্ত থেমে থেমে সেখানে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। সংঘর্ষের একপর্যায়ে মহিপালের পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হওয়া ছাড়াও ইট-পাটকেলের আঘাতে অনেকে আহত হন। আহতদের মধ্যে গণমাধ্যমকর্মীরাও রয়েছেন।
গুলির ভাইরাল ভিডিওতে যা দেখা গেছে
রোববার (৪ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সরকার পতনের একদফা কর্মসূচির সমর্থনে মহিপাল ফ্লাইওভারের নিচে অবস্থান নেন ছাত্র-জনতা। এদিন দুপুর দেড়টা থেকে কর্মসূচিতে হামলা চালায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় অনেকের হাতে ভারী আগ্নেয়াস্ত্র দেখা গেছে।
এদিকে ঘটনার পর থেকে ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণের একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। নেটিজেনরা ভিডিওতে থাকা হত্যাকারীদের পরিচয়সহ ছবিও প্রকাশ করছেন।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, এক ব্যক্তি (কালো জ্যাকেট) শহীদ শহিদুল্লা কায়সার সড়ক হয়ে মহিপাল প্লাজা এলাকা থেকে একটি রিকশা থেকে নেমে গুলি করে করে সামনে দিকে এগিয়ে যায়। তার হাতের ইশারায় পরবর্তীতে পেছন থেকে অন্যরা সামনের দিকে এগিয়ে যান। নেটিজেনরা তাকে ফেনী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি জিয়া উদ্দিন বাবলু বলে দাবি করছেন। এদিন একপর্যায়ে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা পিছু হটলে তাদের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করা হয়। এতে ৮ জন নিহতের হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
এমএসএ