সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় কথা কাটাকাটির জেরে দুই মহল্লাবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আশপাশের ছয় উপজেলার ফায়ার সার্ভিস কাজ করছে। পাশাপাশি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সেনাবাহিনী। তবে এখনো কোনো মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন ইউএনও। 

এ ঘটনায় আতঙ্ক বিরাজ করছে বাজারের সাধারণ ব্যবসায়ীদের মধ্যে। অনেকেই আবার দোকানের মালামাল সরিয়ে নিচ্ছেন। অন্যদিকে কিছু এলাকায় হিন্দুদের ধর্মীয় উপাসনালয় ও বাড়ি পাহাড়ায় এলাকাবাসী ও বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা কাজ করছেন বলে জানা গেছে।

বুধবার (৭ আগস্ট) সকাল ৯টার দিকে এই সংঘর্ষের উৎপত্তি হয়। এরপর দুপুর ১২টার দিকে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ শুরু হয়। আগুন দেওয়া হয় পাট গুদাম ও কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। 

উল্লাপাড়া বাজারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকাল ৯টার দিকে উল্লাপাড়া মাছ বাজারে পঞ্চক্রোশি ইউনিয়নের সাতবাড়িয়া ও পৌরসভার ঝিকিড়ার তালুকদার পাড়া (সান্দার পাড়া নামে পরিচিত) মহল্লার দুজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। এরপর ১২টার দিকে দুই মহল্লা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এরপর বাজারের একটি কসমেটিকসের দোকানে অগ্নিসংযোগ করা হয়, যা আরও কয়েকটি দোকানে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় লুটপাটও হয়েছে। এছাড়াও পাট গুদাম ও সান্দার পাড়াতেও আগুন দেওয়া হয়েছে বলে শুনেছি। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ব্যবসায়ী বলেন, আমরা খুবই আতঙ্কে আছি। দোকানের মালামাল সরিয়ে নিচ্ছি। এই ঝামেলাকে কেন্দ্র করে হামলা বা লুটপাট হতে পারে ভেবে।

উল্লাপাড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. বেলাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা গত কয়েকদিন হলো গ্রামের সাধারণ লোকজনকে ও আমাদের নেতাকর্মীদের নিয়ে ঘোষগাঁতী মহল্লার হিন্দুদের মন্দির, উপাসনালয় ও বাড়িঘরে পাহারা দিচ্ছি। এতে জামায়াত-শিবিরসহ সকল ধর্মের মানুষেরা অংশ নিয়েছে। যেহেতু এটা হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা এবং এর পাশেই স্বর্ণকার মার্কেট তাই এই ঝামেলাকে কেন্দ্র করে যেন এদিকে হামলা-লুটপাট না চালাতে পারে সেদিকেও নজর দিয়ে আমরা ব্যাপক তৎপর রয়েছি। 

এ ব্যাপারে উল্লাপাড়া ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন ইনচার্জ নুরুল ইসলাম বাবু ঢাকা পোস্টকে বলেন, পাটগুদাম ও একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। আমরা উল্লাপাড়া ছাড়াও, শাহজাদপুর, কামারখন্দ, রায়গঞ্জ, সিরাজগঞ্জসহ ৬টি উপজেলা থেকে আসা ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি। 

দুপুর আড়াইটার দিকে তিনি বলেন, পরিস্থিতি খুবই খারাপ ছিল। তবে এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। আগুন এখনো পুরোটা নেভেনি। আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনই বলা যাবে না। 

এ ব্যাপারে উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সানজিদা সুলতানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুজনের কথা-কাটাকাটি নিয়ে দুই মহল্লার মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরপর কয়েকটি জায়গায় অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর এখনো পাওয়া যায়নি। সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। 

শুভ কুমার ঘোষ/আরএআর