প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এমন পরিস্থিতিতে পঞ্চগড়ের আওয়ামী লীগের নেতারা কোথায় আছেন তার তথ্য মিলছে না।

সোমবার (৫ আগস্ট) দুপুরে শেখ হাসিনা পদত্যাগের পর বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন হয়ে  পঞ্চগড় চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান শেখ দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়েছেন বলে জানা গেছে।

একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ইমিগ্রেশন পার হলে ভারতীয় গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে কথা বলেন। তিনি বলেন, ছাত্র আন্দোলন ও  মানুষের যে ২০ বছরের ক্ষোভ ছিল সেটার কারণে এ অবস্থা। এ ঘটনায় বাংলাদেশে একটি অস্থিরতা তৈরি হলো। আমরা মনে করি ৫-৭ বছর আমরা পিছিয়ে গেলাম, এটা আমাদের দুর্ভাগ্য। এসময় তাকে বলতে শোনা যায়, এটা বাংলাদেশের, এটা আমরাই সমাধান করব।

আব্দুল হান্নান শেখ রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে না ছিলেন না। তবে তিনি আওয়ামীপন্থি হিসেবে পরিচিত। তিনি পঞ্চগড় চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি। তবে কী কারণে সরকার পতনের দিনই ভারতে গেলেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন পুলিশের ইনচার্জ অমৃত অধিকারী বলেন, এ বিষয়ে কিছু জানি না। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ভারতে গিয়েছে কি না তা পাসপোর্ট নম্বর ছাড়া নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। তবে তিনি গত তিনদিনে পোর্ট দিয়ে কতজন যাত্রী পারাপার করেছেন সে বিষয়ে একটি তথ্য ছাড়া আর কিছু জানাতে পারেননি।

এদিকে সোমবার শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবরের পর থেকেই বিকেল থেকে শুরু হয় বিক্ষুব্ধ জনতার হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ। ঘটনার ক্ষয়ক্ষতি বিষয়ে জানা যায়, পঞ্চগড়-১ আসনের এমপি নাঈমুজ্জামান ভূঁইয়ার বোদা পৌরসভার সাতখামার এলাকা ও পঞ্চগড় সদরের কাজীপাড়া এলাকায় দুটি বাড়ি, ময়দানদিঘিতে সাবেক রেলমন্ত্রী ও বর্তমান এমপি নূরুল ইসলামের বাড়ি, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ হয়েছে। সদর পৌরসভার কাউন্সিলর আরিফ হোসেন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান শেখ, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম হুমায়ূন কবীর, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান সাকিব পাটোয়ারী বাড়িতে বিক্ষুব্ধদের ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বোদা উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক আলম, বোদা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি অমিয় আলম, বোদা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলমসহ বেশ কিছু নেতাকর্মীর বাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।

এর আগের দিন রোববার দুপুরে অসহযোগ আন্দোলনে বিক্ষুব্ধদের মধ্যে একাংশ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়, সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য রেজিয়া ইসলাম ও তার ছেলে জেলা আওয়ামী লীগে সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাটের বাড়িতে গিয়ে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করেন। এসময় তাদের দুটি গাড়ি ও দুটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। একইদিন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলামের শহরে জালাসী পাড়া এলাকায় বাড়িতে, পৌর মেয়র জাকিয়া খাতুন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আবু মো. নোমান হাসান, কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম, হাসনাত মো. হামিদুর রহমানসহ বিভিন্ন নেতার বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।

এসব ঘটনার পর জেলার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কোথায় রয়েছেন তা জানতে বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বললেও তথ্য মেলেনি। তবে অনেকে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের পর শেখ হাসিনা পরিবার নিয়ে নিরাপদে দেশ ছেড়ে গেলেও বিপদে ফেলে গেছেন দলের সব অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের। এ কারণে নিরাপদে থাকতে তারা আড়ালেই রয়েছেন বলে জানা গেছে।

এসকে দোয়েল/এসএসএইচ