কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের বাসায় হামলা ও ভাঙচুর করেছে ক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা। রোববার (৪ আগস্ট) সন্ধ্যার একটু আগে শহরের পিটিআই রোডের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটেছে। 

ভাঙচুরের খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সেখানে গেলে বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ ঘটে। এসময় পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুঁড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে। এ ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। হামলার সময় ওই বাড়িতে কারা অবস্থান করছিল তা বিস্তারিত জানা যায়নি। সন্ধ্যা ৬টার দিকে আন্দোলনকারীরা হানিফের আলিশান বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। এসময় আওয়ামী লীগের সিনিয়র এই নেতার বাড়ি এবং টং ঘর ভেঙ্গে ফেলা হয়।

এছাড়া রোববার পুরো দিনজুড়েই কুষ্টিয়ায় একদফা দাবির অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা জেলা আওয়ামী লীগের অফিস, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ও ট্রাফিক অফিস ভাঙচুর করেছে। এসময় আন্দোলনকারী ও পুলিশের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। দুপুর ১টার থেকে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত শহরের প্রাণকেন্দ্র মজমপুর, থানার মোড়, ছয় রাস্তার মোড়, ৫ রাস্তার মোড়, জেলা স্কুলের সামনে দফায় দফায় এ ঘটনা ঘটছে। 

এসময় পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। কুষ্টিয়া শহরের এসব এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। আহতরা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসা নিয়েছেন। 

এর আগে আন্দোলনকারীরা কুষ্টিয়া ট্রাফিক অফিস ভাঙচুর, জেলা আওয়ামী লীগের অফিস ভাংচুর, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করেন এবং সড়কের বিভিন্ন জায়গায় আগুন জ্বালিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। পুলিশের ধাওয়া ও রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করলে আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন অলিগলিতে আশ্রয় নেন। 

কর্মসূচির অংশ হিসেবে বেলা ১১টায় কুষ্টিয়া শহরের মজমপুর থেকে শুরু হয়ে চৌড়হাস মোড় পর্যন্ত বিক্ষোভ ও গণসমাবেশ পালিত হয়। সেখান থেকে তারা আবারও মজমপুরে আসেন। এরপর তারা এনএস রোডে যান। তাদের পাশাপাশি বিক্ষোভে অনেক অভিভাবক, সাধারণ মানুষ, বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের যোগ দিতে দেখা গেছে। এসময় মিছিল-স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে কুষ্টিয়া শহর।

রোববার (৪ আগস্ট) ১১টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের মজমপুর মোড় থেকে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ শুরু করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে শুরু করেন। এরপর কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ সড়কের সাদ্দাম বাজার হয়ে চৌড়হাস মোড়ে যান। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান নিয়েছেন।

 

এসময় আন্দোলনকারীরা স্লোগান দেন, আমার ভাই কবরে, বিচার চাই বিচার চাই, ভুয়া ভুয়া, পুলিশ ভুয়া, খুনি খুনি, পুলিশ খুনি, সরকারের পদত্যাগ চাই, আমার ভাইদের হত্যার বিচার চাই, দিয়েছি তো রক্ত, আরও দিবো রক্ত, সরকারের গদিতে আগুন জ্বালো একসাথে।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ও‌সি) মাহফুজুর রহমান ও ২৫০ শয্যা কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) তাপস কুমার সরকারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তারা রিসিভ করেন নি। 

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক হামিদুল ইসলাম বলেন, রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসে আহত হয়ে অসংখ্য রোগী হাসপাতালে এসেছে, এখনো কিছুক্ষণ পরপর রোগী আসছে। বেশিরভাগ রোগীর রাবার বুলেটে আহত। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। কেউই আশঙ্কাজনক নয়।

রাজু আহমেদ/জেএ