সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে মুন্সীগঞ্জ শহরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় সাংবাদিকসহ আহত হয়েছেন শতাধিক। রোববার (৪ আগস্ট) সকাল পৌনে ১০টার দিকে শহরের সুপারমার্কেট এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। দুপুর পৌনে ২টা পর্যন্ত চলে এই সংঘর্ষ।

সংঘর্ষে নিহতরা হলেন, রিয়াজুল ফরহাজী (৩৮)। তিনি শহরের উত্তর ইসলামপুর এলাকার প্রয়াত কাজী মতিন ফরহাজীর ছেলে। একই এলাকার মো. সজল (৩০) এবং ডিপজল সর্দার। এদের মধ্যে রিয়াজুল এবং মেহেদী ঘটনাস্থলে এবং সজলকে হাসপাতাল নেওয়ার পথে মারা যায় বলে জানান তার স্বজনরা।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, রোববার সকাল থেকে শহরে বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। সকাল পৌনে ১০টার দিকে শহরের সুপারমার্কেট এলাকায় আন্দোলনকারীরা বিচ্ছিন্নভাবে আসতে থাকে। আন্দোলনকারীরা শহরের হাটলক্ষীগঞ্জ সড়ক দিয়ে সুপার মার্কেট এলাকায় আসতে চাইলে আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতাকর্মীরা বাধা দিয়ে হামলা করে। পরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় সেখানে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং কয়েকটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়।  আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের সেল ও ছররা গুলি ছোড়ে। এ সময়  অনেক আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ হয়। হতাহতদের উদ্ধার করে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে, নৌ ও সড়ক পথে ঢাকায় পাঠানো হয়।

মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবু হেনা জামাল  বলেন, সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে ২৫ থেকে ৩০ জনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তাদের মধ্যে দুইজন মৃত ছিলেন। দুপুর ২টা পর্যন্ত ৬০ জনের বেশি গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানান এই চিকিৎসক। এ ছাড়াও গুরুতর আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

আন্দোলনকারী কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, সকালে তারা শান্তিপূর্ণভাবে শহরের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছিলেন। তখন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীরা তাদের মারধর শুরু করেন। পরে তারা একত্র হয়ে মিছিল শুরু করেন। পাশে থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা হঠাৎ তাদের ওপর হামলা চালায় এবং গুলি করে। 

এদিকে সংঘর্ষে হতাহতের ছবি ও ভিডিও করার সময় ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে কয়েকজন সাংবাদিককে বেধরক পেটায় সরকার সমর্থিতরা। এতে এনটিভির মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি মঈন উদ্দিন সুমন, ডেইলি ট্রাইবুনালের ফরহাদ হেসেন, যমুনা টেলিভিশনের ফটো সাংবাদিক হৃদয় হাসান ও সমকালীন কাগজের মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি মো. সুমন আহত হন।

গুলিবিদ্ধ হয়ে আহতের এক স্বজন মো. রহম বলেন, আহতদের মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিতে দেওয়া হচ্ছে না। সড়ক পথে বাধা দিচ্ছে। আমরাসহ অনেকেই ট্রলারে করে নারায়ণগঞ্জ হয়ে ঢাকার দিকে গেছি। কি নির্মম অবস্থা। মারার পর চিকিৎসাও নিতে দিচ্ছে না।

এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসলাম খান বলেন, দিনব্যাপী দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ যথেষ্ট ধৈর্য ধরে ঘটনা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। পুলিশ ব্যক্তিগতভাবে কোনো পক্ষকে উদ্দেশ্য করে টিয়ার সেল ছোড়েনি। সংঘর্ষে হতাহতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি হাসপাতাল থেকে জানতে হবে।

ব.ম শামীম/এএমকে