ফেনীতে ভেঙে গেছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, লোকালয়ে ঢুকছে পানি
ফেনীতে ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজানের পানিতে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পাঁচটি অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে লোকালয়ে পানি ঢুকে অন্তত ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। শুক্রবার (২ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টার দিকে নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ২২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে পরশুরাম উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ শালধর জহির চেয়ারম্যানের বাড়ি সংলগ্ন মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে। এতে মালিপাথর, দক্ষিণ শালধর এবং পাগলিরকুল এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গত মাসেও বাঁধের একইস্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছিল।
বিজ্ঞাপন
দুপুরের দিকে বক্সমাহমুদ ইউনিয়নে কহুয়া নদীর টেটেশ্বর এলাকায় একটি ও সাতকুচিয়া এলাকায় বাঁধের দুইটি স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এতে সাতকুচিয়া, বাঘমারা, টেটেশ্বর ও চাড়িগ্রাম এলাকার শতশত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বিকেলে দিকে মির্জানগর ইউনিয়নের পশ্চিম মির্জানগর এলাকায় সিলোনিয়া নদীর বাঁধে ভাঙন শুরু হয়। এতে কালীকৃষ্ণনগর, পশ্চিম মির্জানগর, গদানগর, মনিপুর, ছয়ঘরিয়া ও সত্যনগর এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
আরও পড়ুন
কর্তৃপক্ষের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে চিথলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফেলতির কারণে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে বারবার লোকালয় প্লাবিত হচ্ছে। একমাস আগে ভেঙে যাওয়া বাঁধ সংস্কারে গড়িমসি করার কারণে আবারও একই স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সকাল থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো কর্মকর্তাকে ভাঙন এলাকায় দেখা যায়নি। এখনো পানি ঢুকে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
মির্জানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান ভুট্টু বলেন, পশ্চিম মির্জানগর এলাকায় সিলোনিয়া নদীর বাঁধ ভেঙে প্রায় এক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ১০০ পরিবারের জন্য শুকনো খাবার দিয়েছেন। আমরাও ব্যক্তিগতভাবে বন্যাদুর্গত মানুষদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী (অ. দা.) মো. আবুল কাশেম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এর আগে কখনো এতো পানি দেখা যায়নি। গত দুইদিনের ভারি বর্ষণ ও উজানের পানিতে মুহুরী ও কহুয়া নদীর পানি বিপৎসীমার ২২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত পাঁচটি স্থানে ভাঙনের তথ্য পেয়েছি। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বাঁধের আরও কয়েকটি অংশে ভাঙন সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
আবহাওয়া অধিদপ্তর ফেনীর উচ্চ পর্যবেক্ষক সালেহ আহাম্মদ বলেন, জেলায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ১৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত ১৫৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী দুই দিন জেলায় মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
উল্লেখ্য, গতমাসেও ভারী বৃষ্টি ও উজানের পানিতে ফেনীর পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় মুহুরী নদীর বাঁধের একাধিক স্থানে ভেঙে অন্তত ৪৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছিল।
তারেক চৌধুরী/আরকে