নোয়াখালীতে ২০ বছরে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত
২৪ ঘণ্টার টানা বর্ষণে ২৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে নোয়াখালীতে। ভারী ও টানা বর্ষণে ডুবেছে নোয়াখালী পৌরসভা। জলাবদ্ধতায় আটকে আছে লাখো মানুষ। ডুবে গেছে সড়ক, বাসাবাড়িতেও ঢুকছে পানি। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় দীর্ঘ সময়ের ব্যাপক জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় পৌরবাসীদের। তবে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে দুই দিন সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন পৌর মেয়র।
শুক্রবার (২ আগস্ট) দুপুরে আবহাওয়া অধিদপ্তর নোয়াখালী কার্যালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় অর্থাৎ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। যা নোয়াখালীর ইতিহাসে ২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। শনিবারও বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, গত জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে সরকারি অফিস সমূহসহ পানি ঢুকেছে বাসা বাড়ি ও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সমূহে। এতে লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে পৌরবাসীর সপ্তাহ খানেক সময় লেগে যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের বিভিন্ন সড়কে পানি জমে রয়েছে। এ সব সড়ক দিয়ে রিকশা, অটোরিকশার যাতায়াত করতে সমস্যা হচ্ছে। হাঁটু সমান পানির মধ্যেই অনেকে রিকশা ও অটোরিকশায় ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছেন। দেখলে মনে হবে সড়কগুলো আস্ত একটি খালে পরিণত হয়েছে। বোঝার উপায় নেই এটি সড়ক নাকি খাল!
শিল্পকলা একাডেমির সামনে জলাবদ্ধতায় আটকে থাকা পথচারী মো. জাফর জয় ঢাকা পোস্টকে বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই শহরের প্রধান প্রধান সড়কে পানি জমে থাকে। গত মাসেও এমন অবস্থা হয়েছে। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সামনে আরো বৃষ্টি হবে, তাই দ্রুতই পৌর কর্তৃপক্ষকে এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। এছাড়া শহরের রাস্তাগুলো ভাঙাচূড়া। একদিনে দীর্ঘদিন ধরে রাস্তা-ঘাট বেহাল, অন্যদিকে সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তায় জমে থাকে হাঁটু পানি। এতে পৌরবাসীর দুর্ভোগের শেষ নেই।
রিকশা চালক মিলন মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে আমাদের রিকশা চালাতে অনেক সমস্যা হচ্ছে। তার মধ্যে বৃষ্টির পানির সঙ্গে ড্রেনের নোংরা পানি মিশে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। ড্রেনেজ ব্যবস্থা সঠিক না থাকার কারণে এমন জলাবদ্ধতার তৈরি হয়েছে। আমরা দ্রুতই এ সমস্যার সমাধান চাই।
পৌরসভার সাতানি পুকুর পাড় এলাকার অধিকাংশ বসতবাড়িতে পানি ঢুকেছে। ফলে পানিবন্দি অবস্থায় আছেন অসংখ্য পরিবার। হামিদা শিপু নামের এক শিক্ষিকা ঢাকা পোস্টকে বলেন, পানি বাসায় প্রবেশ করায় খাট থেকে নামতে পারছিনা। এসব পানিতে সব ঝোঁক মন হচ্ছে ছোট ছোট সাপও আছে। গেইটের বাইরে হাটুর নিচে হবে। গেইট বন্ধ। আমরা ভেতরে আটকে আছি। বৃষ্টি থেমে থাকলে পানি কিছুটা কমে। বৃষ্টি হতে থাকলে আবার পানি জমে থেকে বেড়ে যায়।
আবহাওয়া কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। গত ২৪ ঘন্টায় অর্থাৎ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। যা নোয়াখালীর ইতিহাসে ২০ বছরে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত।
পানি উন্নয়ন বোর্ড নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সী আমির ফয়সাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, জলাবদ্ধতা রোধ প্রকল্পে শহর ও আশপাশের ১৬১ কিলোমিটার খাল খনন করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড নোয়াখালী। সাথে সাথে নোয়াখালী খালও খনন করা হয়েছে। যেটা নোয়াখালীর দুঃখ ছিল। তবে পুরোপুরি জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে ড্রেন ও নালা রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন।
নোয়াখালীর পৌরসভার মেয়র সহিদ উল্যাহ খান সোহেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিভিন্নস্থানে জলাবদ্ধতার ফলে ভোগান্তির বিষয়ে আমি খবর পেয়েছি। আমরা দ্রুতই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করছি। আসলে ড্রেনগুলো পরিষ্কার না থাকায় এমন হয়েছে। আমার কর্মীরা কাজ করছে। তবে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে সাময়িকভাবে এটা হয়েছে। আগামী দুই এক দিনের মধ্যে এটি সমাধান হয়ে যাবে বলে আমি আশা করছি।
জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, শুক্রবার বিকেলে আমরা সবাইকে নিয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনে সভা করেছি। এতে মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট সবাই ছিলেন। আমরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করতে চাই।
হাসিব আল আমিন/আরকে