আহসান হাবিব তামিম

‘তামিম এই আন্দোলনে ছিল না। আমার ছেলে ছাত্রলীগ করত, আন্দোলন দেখতে গিয়ে গুলিতে নিহত হয়। তামিম আমার সারাজীবনের সাধনা ছিল। বড় ভার্সিটিতে পড়ে আমাদের হেল্প করবে এটাই ছিল আশা। কিন্তু সেই ছেলে আমারে রেখে চলে গেল। আমার বুকটা খালি হয়ে গেছে। আর কোনো বাবার যেন বুক খালি না হয়।’

কাঁদতে কাঁদতে ঢাকা পোস্টকে কথাগুলো বলছিলেন গত ১৯ জুলাই (শুক্রবার) রাজধানী ঢাকার মিরপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আহসান হাবিব তামিমের বাবা আব্দুল মান্নান। তামিম জবির গণিত বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

জানা যায়, তামিমের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার পূর্ব শোশালিয়া গ্রামে। তবে গ্রামে তাদের ঘর নেই। তারা ঢাকাতেই বসবাস করেন। নিম্ন আয়ের পরিবারে তিন সন্তানের মধ্যে তামিম ছিল দ্বিতীয়। তার বড় ভাই বাবার সঙ্গেই মিরপুরে মোটর মেকানিকের কাজ করেন আর ছোট ভাইয়ের বয়স ৪ বছর। গত ২০ জুলাই (শনিবার) সকাল ৮টায় জানাজা শেষে তামিমের মরদেহ তার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।

নিহত তামিমের বাবা আরও বলেন, ‘আমি দেশে (নোয়াখালী) ঘরবাড়ি করি নাই। পুতেরা (ছেলে) করতে পারলে করবে। ওদেরকে মানুষ করি; এই ছিল আমার লক্ষ্য। আমার এ ছেলে (তামিম) ভার্সিটি শেষে আমার কাজেও হেল্প করত। গত ১৯ জুলাই বিকেলে আমরা দুপুরের খাবার খাওয়ার পর বাসায় ঘুমিয়ে ছিলাম। আমি তার বন্ধুদের থেকে শুনেছি, তামিম বাসা থেকে বের হয়ে তাদের সঙ্গে আন্দোলন দেখার জন্য গিয়েছিল। আন্দোলনের ভয়াবহতা দেখে সে মিরপুরের শাহ আলী মার্কেটের পেছন দিয়ে ফিরে আসছিল।’

ছেলের মরদেহ খুঁজতে হন্য হয়ে হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরেছি উল্লেখ করে আব্দুল মান্নান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ছেলে শাহ আলী মার্কেটের পেছন দিয়ে ফিরে আসার সময় গুলিবিদ্ধ হয়। তার মরদেহ খুঁজতে হন্য হয়ে হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরেছি। ফোনে গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর শুনে আমি প্রথমে মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বর, তারপর আল হেলাল হাসপাতালে যাই। আল হেলাল হাসপাতালে গেলে সেখান থেকে আমাকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে বলা হয়। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গিয়ে আমি তামিমের গুলিবিদ্ধ মরদেহ খুঁজে পাই।

তামিমের চাচা মো. মোস্তফা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের আশাভরসা সব শেষ। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই তো বাবা-মা একজন সন্তানকে লালনপালন করেন। সেই আশা শেষ হয়ে গেল। আমাদের আফসোস করা ছাড়া তো আর কিছুই করার নেই।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন,  এমন একজন মেধাবী শিক্ষার্থীর প্রাণ ঝরে যাওয়া কখনোই কাম্য নয়। আমরা তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।

হাসিব আল আমিন/এমজেইউ