‘বাবা হয়ে সন্তানের লাশ কাঁধে নেওয়ার কষ্ট বলে বুঝাতে পারব না’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজধানীর কবি নজরুল কলেজ সংলগ্ন লক্ষ্মীবাজারে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন ইকরাম হোসেন কাউছার। গত ১৯ জুলাই জুমার নামাজের পর আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। পরে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত ইকরাম ফেনীর পরশুরাম উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের রাজষপুর পাগলিরকুল এলাকার মাওলানা আনোয়ার হোসেনের বড় ছেলে। তিনি ঢাকার কবি নজরুল কলেজে অর্থনীতি বিভাগে স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
পরিবারের বড় সন্তানকে হারিয়ে শোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন ইকরামের মা রুমি আক্তার। আহাজারি করে তিনি বলেন, ছেলে বিসিএস ক্যাডার হয়ে একদিন বড় কর্মকর্তা হবে এমন স্বপ্ন ছিল। চোখের পলকেই সব স্বপ্ন শেষ করে দিয়েছে তারা। কার কাছে বিচার চাইব, কাকে বলব এসব কথা। আমার ছেলেকে তো আর ফিরে পাবো না।
নিহত ইকরামের বাবা মাওলানা আনোয়ার হোসেন বলেন, বাবা হয়ে সন্তানের লাশ কাঁধে নেওয়ার কষ্ট কাউকে বলে বুঝাতে পারব না। ছেলেকে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন ছিল। ঘাতকরা সব স্বপ্ন শেষ করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, আমার ছেলের কি অপরাধ ছিল? কেন তাকে গুলি করে হত্যা করা হলো? এতোটাই অপরাধ করলে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যেতো তারা। আমি আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম। নিশ্চয়ই তিনি সঠিক বিচার করবেন।
নিহতের ছোট ভাই ফারুক হোসেন বলেন, ঘটনার দিন বিকেল ৪টার দিকে ভাইয়া কলেজ সংলগ্ন লক্ষ্মীবাজার এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হন। পরে এক ভ্যানচালক উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ওই ভ্যানচালকই বাবাকে ফোনকলে মৃত্যুর কথা জানান। পরেরদিন রাত ৯টার দিকে গ্রামের বাড়িতে জানাজা শেষে ভাইয়ার দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
কামাল হোসেন নামে তার এক প্রতিবেশী বলেন, এলাকার মধ্যে ইকরাম অত্যন্ত ভদ্র ও বিনয়ী ছিল। ছুটিতে বাড়িতে আসলে সবার সঙ্গে মিশতো। তার এমন আকস্মিক মৃত্যু কেউ মানতে পারছেন না।
এ ব্যাপারে চিথলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে তার মৃত্যু হয়েছে বলে জেনেছি। গত ২০ জুলাই রাতে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
তারেক চৌধুরী/এনটি