বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর মিরপুরে ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন মো. সাগর মিয়া (২০) নামে এক যুবক। গত ১৯ জুলাই সন্ধ্যায় মিরপুর ১০ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হন সাগর। পরে স্থানীয় একটি হাসপাতাল থেকে তার মরদেহ শনাক্ত করে পরদিন কুমিল্লার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।

নিহত সাগর কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার বড় শালঘর গ্রামের আবু হানিফ মিয়ার একমাত্র ছেলে। বাবা-মা ও দুই বোনসহ মিরপুর-১ নম্বর এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন সাগর। কিডনি রোগে আক্রান্ত বাবার চিকিৎসা ও সংসারের খরচ চালাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করতেন তিনি।

নিহত সাগরের বাবা আবু হানিফ মিয়া বলেন, মিরপুর-১ নম্বর একটি ভাড়া বাসায় দুই মেয়ে, একমাত্র ছেলে সাগর এবং স্ত্রীকে নিয়ে থাকি। বেশ কয়েক বছর ধরে আমার কিডনিতে সমস্যা। ছেলে সাগর ভ্যানে করে মিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় সবজি বিক্রি করত। যা আয় হত তা দিয়ে সংসার এবং আমার চিকিৎসা চালাতো। গত বৃহস্পতিবার কাঁচামালগুলো এনেছিল। সেদিন গণ্ডগোলের কারণে সেগুলো বিক্রি করতে পারেনি। পরদিন শুক্রবার কারফিউ ছিল। ভেবেছিল সবজিগুলো পচে যাচ্ছে, আবার আমার ওষুধও আনতে হবে। কাছে কোথাও বিক্রি করে আবার বাসায় চলে আসবে। আমি ও আমার স্ত্রী মিলে নিষেধ করেছিলাম বের না হতে। কিন্তু ছেলেটা কথা শুনল না। বের হয়ে গেল।

তিনি আরও বলেন, বিকেলে ফোন করেও সাগরকে বলেছি বাসায় চলে আসার জন্য। তখন সে আমাকে জানায়, মিরপুর-১০ নম্বর এলাকায় আছে। এখানে অনেক গোলাগুলি হচ্ছে, আমি এখন আসতে পারব না। এরপর সন্ধ্যায় ফোন দিলে তার মোবাইল বন্ধ পাই। পরে রাত ৮টার দিকে আমি সাগরকে খুঁজতে বের হই। তখনও বাইরে টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও গোলাগুলি চলছিল। পরে রাত ১০টার পর আমি মিরপুর-১০ নম্বরে এসে সাগরের খোঁজ নিলে কেউ একজন জিজ্ঞাসা করেন, আপনার ছেলে কি সবজি বিক্রি করত? আমি হ্যাঁ বললে তিনি একটি প্রাইভেট হাসপাতালে খোঁজ নিতে বলেন। মিরপুরে যারা আহত হয়েছেন তারা নাকি প্রায় সবাই ওই হাসপাতালে আছেন। আমি দৌড়ে ওই হাসপাতালে গিয়ে খোঁজ করলে তারা রাত ৩টার পর আমার ছেলের মরদেহ দেখায়। 

সাগরের জন্য কান্না থামছে না দাদি রাজিয়া খাতুনের। সাগরের ছবি দেখিয়ে কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, আমার নাতিটাকে ওরা মেরে ফেলেছে। আমার নাতিটা আর নেই। আমার ছেলেটার ওষুধ কিনে দেবে কে? আমার অসুস্থ ছেলেটার সংসারটা চালাবে কে?
 
দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিগার সুলতানা বলেন, এখন পর্যন্ত কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে দেবিদ্বারের তিনজন নিহত হয়েছেন। তাদের এলাকায় এনে দাফন করা হয়েছে। পরিবারগুলোর সদস্যদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়েছে। আমি নিজে তাদের বাড়িতে গিয়ে সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা তুলে দিয়েছি। সাগরের পরিবারকেও সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হবে।

আরিফ আজগর/আরএআর