মানিকগঞ্জে সরকারি কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তিতে অতিরিক্ত অর্থ আদায়!
মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিতে বোর্ড নির্ধারিত টাকার চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। নতুন শিক্ষাবর্ষে সরকারি দেবেন্দ্র কলেজে ৩৩০ টাকা রশিদের মাধ্যমে বোর্ডে নির্দেশনা উপেক্ষা করে ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করছে কলেজের কর্তৃপক্ষ। সব জেনেও পড়াশোনা চলমান রাখতে বাধ্য হয়েই এই অতিরিক্ত টাকা দিয়ে ভর্তি হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
ভর্তি হতে আসা শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪- ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য অনলাইনে বোর্ড নির্ধারিত টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে কলেজে ভর্তির জন্য ফরম জমা দিতে এসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সাথে অতিরিক্ত নগদ ৩৩০ টাকা জমা দিতে হয় তাদের। তবে কেন এই অতিরিক্ত টাকা দিচ্ছেন জানেন না এসব শিক্ষার্থীরা। আবার অনেকেই অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার বিষয়টি জেনেও বাধ্য হয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য এই টাকা জমা দিচ্ছেন।
বিজ্ঞাপন
একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি বিষয়ে জানতে চাইলে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদুর ইসলাম বলেন, ‘আমি একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার জন্য অনলাইনে ভর্তি আবেদনের পর ব্যাংকে ২৫৯৫ টাকা জমা দিয়েছি। কলেজে ভর্তির জন্য সব কাগজপত্রের সাথে কলেজ থেকে অতিরিক্ত ৩৩০ টাকা দিতে হয়েছে। রশিদের মাধ্যমে এই টাকা দিয়েছি, তবে কোনো খাতে কত টাকা তা রশিদে উল্লেখ্য নেই। শুধু উল্লেখ রয়েছে ডিজিটাল হাজিরা পরিচালনা ব্যয়, একাডেমি ক্যালেন্ডার, কলেজ ব্যাচ,আইডি ফরম ও অন্যান্য।
ভর্তি হতে আসা মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী এ্যানি আক্তার বলেন, ভর্তির জন্য বোর্ড নির্ধারিত টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে কলেজে আসার পর জানতে পারলাম অতিরিক্ত আরও ৩৩০ টাকা দিতে হবে। পরে আমার এক বান্ধবীর কাছ থেকে ধার করে ৩৩০ টাকাসহ সব কাগজপত্র জমা দিয়ে ভর্তি হলাম। কিন্তু এই অতিরিক্ত টাকা কেন নিচ্ছে তা জানি না।
জুলেখা আক্তার নামে এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, শিক্ষার্থীদের ভর্তির জন্য বোর্ড কত টাকা দিতে হবে তা নির্ধারণ করে দিয়েছে। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত ৩৩০ টাকা নেওয়া কতটুকু যুক্তিসংগত। দেবেন্দ্র কলেজে প্রায় ২ হাজারের মত শিক্ষার্থী ভর্তি হবে, এখন সব ছাত্রছাত্রীর কাছ থেকে ৩৩০ টাকা করে নিলে টাকার পরিমাণটা কিন্তু কম নয়।
জানা গেছে, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের একাদশ শ্রেণিতে মানবিক শাখায় ৮২৫ জন, ব্যবসায়ী শাখায় ৬০০ এবং বিজ্ঞান বিভাগের ৪২৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে। বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী অনলাইনের মাধ্যমে ভর্তি হচ্ছে মানিকগঞ্জসহ বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরিপত্র অনুযায়ী ভর্তি ও সেশন চার্জ বাবদ সর্বোচ্চ ২৫৯৫ টাকা এবং সর্বনিম্ন ২২৫৫ টাকা বেধে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বোর্ডের নির্দেশনা উপেক্ষা করে দেবেন্দ্র কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থকে অতিরিক্ত ৩৩০ টাকা নিচ্ছে। সেই হিসেব অনুযায়ী ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে সকল শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৩৩০ টাকা করে মোট ৬ লাখ ১০ হাজার টাকা অতিরিক্ত টাকা আদায় করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি কমিটির সদস্য রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. মাহাফিল খান, অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আহামুদুল্লাহ ও গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বায়জিদ হাসানের কাছে ৩৩০ টাকা কোন খাতে কত টাকা নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে একটি হিসাব দেখান। এতে ৩৩০ টাকার হিসাব দেখানো হয় পাঠ পরিক্রমা ৫৮ টাকা, আইডি ফরম ৩ টাকা, রিসিট ২ টাকা, ডিজিটাল আইডি কার্ড ৮৫ টাকা, ডিজিটাল মেশিন ৬০ টাকা ও দুই বছরের শিক্ষার্থীদের এসএমএস ১২২ টাকা। কিন্তু সবগুলো খাত যোগ করা হলে তাতে দেখা যায় ৩৩৩ টাকা হয়। খরচের খাত বেশি হওয়ার প্রসঙ্গে ওই শিক্ষকরা জানান এটা কম বেশী হতে পারে। তাই আইডিয়া করে হিসাব করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম জানান, একাডেমি কাউন্সিলর মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৩৩০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। তবে এই অতিরিক্ত টাকা কোন খাতে নেওয়া হচ্ছে তা একাডেমি কাউন্সিলর মিটিংয়ের রেজুলেশন বই দেখাতে পারেননি। পরে অধ্যক্ষ ভর্তি কমিটির শিক্ষকদেরকে তার কক্ষে ডেকে নিয়ে আসনে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর মো. রিজাউল হক বলেন, এ ধরনের ফি নিতে বোর্ড কোন নির্দেশনা দেয়নি। কলেজের একাডেমিক কাউন্সিল ফি নিতে পারেন। তবে তার স্বচ্ছতা থাকা উচিত যেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানতে পারে কী কারণে টাকা নেওয়া হচ্ছে। তবে ঢালাওভাবে টাকা আদায় করা ঠিক নয়। বিষয়গুলো নিয়ে বোর্ড সভায় আলোচনা করা হবে। এ বিষয় নিয়ে যাতে কোনো প্রশ্ন না ওঠে সে বিষয়ে কাজ করব। কেউ যদি নিয়মের বাইরে কোনো অর্থ আদায় করে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সোহেল হোসেন/আরকে