ইনসেটে নিহত নাজমুল হাসান

কর্মস্থলে যাওয়ার পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান নাজমুল হাসান (২২)। গত ১৯ জুলাই (শুক্রবার) দুপুরে ঢাকার আফতাবনগর এলাকায় কোটা সংস্কারের দাবিতে চলা আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হন নাজমুল।

নাজমুল মাদারীপুর সদর উপজেলার চরগোবিন্দপুর এলাকার সৈয়দ আবুল কায়েসের ছেলে। নাজমুলের পরিবারে মা-বাবা ও এক বোন রয়েছে।

নিহত নাজমুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, আদরের একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা নাজমা। শোকে পাথর বাবা সৈয়দ আবুল কায়েস। পাড়া প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনরাও কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবার। একমাত্র ভাইকে হারিয়ে আর্তনাদ করছেন বোন। শোকে আচ্ছন্ন স্বজন-প্রতিবেশী।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, জীবিকার তাগিদে ছোটবেলা থেকেই রাজধানী ঢাকায় অবস্থান করেন নাজমুল হাসান। পরিবারের হাল ধরতে রাজধানীর ফরাজী হাসপাতালের ফিজিওথেরাপি টেকনিশিয়ান হিসেবে এক বছর আগে চাকরি নেন নাজমুল। গত ১৯ জুলাই দুপুরে আফতাবনগর এলাকার বাসা থেকে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে বের হন তিনি। গোলাগুলি ও সংঘর্ষের কারণে সড়কে যানবাহন না পেয়ে পায়ে হেঁটে যাওয়ার সময় বনশ্রী এলাকার গোদারা ঘাটের সাঁকোর কাছে পেটে গুলি লাগে। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন নাজমুল। পাশে থাকা এক পথচারী নাজমুলকে উদ্ধার করে নিয়ে যান নাগরিক প্রাইভেট হাসপাতালে। সেখানে কিছুক্ষণ চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় মারা যান তিনি। ওইদিন রাতেই তার মরদেহ নিয়ে আসা হয় গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর সদর উপজেলার চরগোবিন্দপুর এলাকায়। ২০ জুলাই পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় নাজমুলকে।

নাজমুলের আকস্মিক মৃত্যুতে হতবাক আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসী। এই ঘটনায় দোষীদের বিচারের দাবি ও অসহায় পরিবারটির পাশে সরকারকে এগিয়ে আসার আহ্বান স্বজন ও এলাকাবাসীর।

নিহত নাজমুলের বাবা সৈয়দ আবুল কায়েস বলেন, আমার ছেলে কাজে যাওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। নামজুল ছিল পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস। আমরা এখন অসহায় হয়ে পড়েছি। এই ঘটনায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিহত নাজমুল হাসানের মা নাজমা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে কাজে যাওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। ও তো আন্দোলন করে নাই। আমার ছেলেকে কেন গুলি কইরা মারলো? আমার একমাত্র ছেলে। আমি এখন কি নিয়া বাঁচমু?’

নাজমা বেগম বলেন, ‘বাইরে গোলাগুলি হচ্ছে, অনেকবার নিষেধ করেছিলাম ডিউটিতে যাওয়ার দরকার নেই। কিন্তু আমার কথা শুনেনি ছেলেটা। হতভাগা এভাবেই সবাইকে কাঁদিয়ে চলে যাবে, বুঝতেও পারিনি।’

নিহতের মামা সাইদুল মাতুব্বর বলেন, এই ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করা হোক। নির্দোষ একটি ছেলেকে গুলি করে মেরে ফেলল, তার বিচার হওয়া উচিত।

প্রতিবেশী মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ছোটবেলা থেকেই নাজমুল ঢাকায় থাকে। এলাকায় ও ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিল। তার এমন মৃত্যু কোনোভাবেই আমরা মেনে নিতে পারছি না।

এমজেইউ