নির্বাক হয়ে পড়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনে গুলিতে নিহত কুড়িগ্রামের নুর আলমের স্ত্রী খাদিজা বেগম (১৯)। বিয়ের এক বছরের মাথায় স্বামীকে হারিয়ে গর্ভে ৮ মাসের সন্তান নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি। স্বামীর হত্যাকাণ্ডের বিচারসহ অনাগত সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়ে দেওয়ার দাবি তার। একই দাবি নুর আলমের স্বজনসহ প্রতিবেশীদের।

নিহত নুর আলমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্বামী হারিয়ে হতবাক ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা খাদিজা বেগম কখনো স্বামীর ছবি দেখে ডুকরে কেঁদে উঠছেন, আবার কখনো নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকছেন কবরের পাশে। 

গত ২০ জুলাই সকালে গাজীপুরের চৌরাস্তা এলাকায় রাজমিস্ত্রীর কাজ করে ভাড়া বাসায় খেতে যাচ্ছিলেন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের মোল্লা পাড়া এলাকার ২০ বছর বয়সী যুবক নুর আলম। সেই সময় কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘর্ষের সময় একটি গুলি তার চোখ ভেদ করে বেরিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়ে নুর আলম। পরে স্থানীয়রা তাকে হাসপাতালে নিলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। তার মরদেহ রাখা হয় জয়দেবপুরে সরকারি হাসপাতালে। সেখান থেকে মরদেহ নিয়ে এসে পরের দিন (২১ জুলাই) গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রামে দাফন করা হয়। নুর আলমের এমন মৃত্যুতে শোকাহত হয়ে পড়েছেন স্বজনসহ প্রতিবেশিরা। নিহত নুর আলমের স্ত্রী তার গর্ভের সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।

স্থানীয় শফিকুল ইসলাম বলেন, নুর আলম খুবই ভালো ছেলে ছিল। কোনো দল বা রাজনীতি করতো না। তারা গরিব মানুষ দিন করে দিন খেতো। ঢাকায় রাজমিস্ত্রীর কাজ করতে গিয়ে সে আজ গুলিতে মারা গেল। আমরা এ হত্যার বিচার চাই। 

প্রতিবেশী মিলন বলেন, নিহত নুর আলমের পরিবার খুবই গরিব। সংসারে অভাব অনটন কমাতে সবাই কাজ করতে ঢাকায় গেছেন। সেখানেই কদিন আগে ছাত্রদের আন্দোলনে নুর আলম মারা গেল।

নিহত নুর আলমের স্ত্রী খাদিজা বেগম বলেন, আন্দোলনে গুলি করে নির্মমভাবে আমার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। যারা আমার স্বামীকে মারছে তার বিচার চাই। সরকারের কাছে স্বামী হত্যার বিচার, আমার ও পেটের সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়ে দেওয়ার দাবি করছি।

কুড়িগ্রাম সদরের ভোগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাঈদুর রহমান বলেন, আমার ইউনিয়নের ভ্যানচালক আমির হোসেন ও নুর বানু দম্পতি জীবিকার তাগিদে দুই ছেলে ও এক ছেলের বউকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করতেন। হঠাৎ গুলিতে কর্মক্ষম বড় ছেলেকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন পরিবারটি। এ অবস্থায় পরিবারটিকে সহায়তা দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।  

জুয়েল রানা/আরকে