ছেলের ছবি হাতে ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে অঝোরে কেঁদে চলেছেন মা বেনু বেগম। মায়ের সঙ্গে দেখা করতে ঢাকার মিরপুর থেকে রওনা হয়েছিল ছেলে ফিরোজ তালুকদার পলাশ (৩৮)। তবে বিধিবাম, সেদিন শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনে পড়ে পুলিশের গুলিতে মারা যান পলাশ।

রোববার (২৮ জুলাই) বিকেলে কোটা আন্দোলনে নিহত পলাশের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর পৌরসভার ঘাটান্দি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পলাশের মা বেনু বেগম ছবি হাতে নিয়ে কান্না করছেন। বাড়িতে সুনসান নীরবতা। একটি কাঁচা টিনের ঘরে পলাশের মা বসবাস করেন। তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন প্রতিবেশীরা। তবে পলাশের স্ত্রীকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। স্বামীর অবর্তমানে সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিতে পলাশের মৃত্যুর কয়েকদিন পরই কর্মস্থলে যোগ দিতে হয়েছে স্ত্রী রেশমা খাতুনকে।

জানা গেছে, ৫ বছর আগে নিহত পলাশ ঢাকার মিরপুর ১২ এলাকায় রংপুর কেমিক্যাল কোম্পানিতে অফিস সহায়ক (পিয়ন) হিসেবে চাকরি করে আসছেন। গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) সারাদেশে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুরো দেশ যখন টালমাটাল ঠিক তখনই মায়ের সঙ্গে দেখা করতে পলাশের মন অস্থির হয়ে ওঠে। মায়ের সাথে দেখা করতে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। এসময় মিরপুর-১০ এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে হঠাৎ পুলিশের গুলিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে পলাশ। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে মিরপুরের আলোক হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে পলাশের ব্যবহৃত মোবাইলে থাকা তার মায়ের নম্বরে ফোন করে জানানো হয় তার ছেলে মারা গেছে। পলাশের স্ত্রী খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে স্বামীর মরদেহ দেখতে পায়। ওই দিন গভীররাতেই অ্যাম্বুলেন্সে পলাশের মরদেহ আনা হয় তাদের গ্রামের বাড়িতে। পরেরদিন শনিবার (সকালে) ঘাটান্দির তালুকদার কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

পলাশের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী ইশরাত জাহান সাবিনা বলেন, পলাশের বুকে একটাই গুলি করা হয়েছে। তার পুরো শরীর রক্তাক্ত হয়েছিল। ৭ বছরের ছোট্ট মেয়ে তার বাবাকে হারালো। ওইদিন বিকেল ৫টার দিকে তার সাথে সর্বশেষ কথা হয়েছে। এইভাবে কারো মৃত্যু হবে এটা ভাবা যায় না। মৃত্যুর এক সপ্তাহ আগেও বাড়িতে এসেছিল সে। অনেক স্বপ্ন ছিল তার। কে জানতো বাড়ি আসার জন্য তাকে মরতে হবে।

নিহত পলাশের মা বেনু বেগম বলেন, আমার বাবাকে গুলি করে মেরেছে পুলিশ। একটা গুলি লেগেছে তার বুকে। পায়েও গুলি লাগছে। বাসা থেকে আমার কাছে আসতে চাইছিল আমার বাবা। গাড়ি পায় নাই আসার জন্য। আমার দুই ছেলের একটা চইলা গেল আমাকে ছেড়ে। আমি বিচার চাই। আমার নাতনি, ছেলের বউ তাদের ভবিষ্যৎ কী হবে।

অভিজিৎ ঘোষ/আরকে