ট্রেন চলাচল বন্ধ, কর্মহীন শত শত মানুষ
রাজু আহম্মেদ (২৫)। বাড়ি ভৈরব জেলার আশুগঞ্জ থানার সোনারামপুর গ্রামে। বিগত দশ বছরের অধিক সময় ধরে ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনের দুই নম্বর প্লাটফর্মে খাঁচিতে করে ব্যবসা করেন কলা-রুটির। মাসিক তিন হাজার টাকায় ভাড়া থাকেন পাশের একটি ব্যাচেলর মেসে। কিন্তু বিগত ৯ দিন ধরে কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে বন্ধ রয়েছে ট্রেন চলাচল। এতে যাত্রী না থাকায় বেচাকেনা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে কর্মহীন অবস্থায় দিন কাটছে তার। এই অবস্থায় পকেটে টাকা না থাকায় পরিবার নিয়ে দুঃশ্চিন্তার ভাঁজ তার চোখে-মুখে।
রোববার (২৮ জুলাই) দুপুরে ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনের দুই নম্বর প্লাটফর্মে নিজ দোকানে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করছিলেন তিনি। এ সময় ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা হয় রাজুর।
বিজ্ঞাপন
তিনি জানান, হঠাৎ ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্টেশনে মানুষজনের আনাগোনা নেই। গত কয়েকদিনে আমার দোকানের তিন হাজার টাকার কলা ও রুটি নষ্ট হয়ে গেছে। এই মাসের বাসা ভাড়াও এখন পকেটে নেই। প্রতিদিন খাবার খরচ হয় দুই থেকে তিনশ টাকা। এই অবস্থা কতদিন চলবে, এখন কী করব? তাও বুঝতে পারছি না।
আরও পড়ুন
একই অবস্থা নগরীর কালীবাড়ী এলাকার বাসিন্দা সুমন বর্মনের (৩৫)। তিনিও স্টেশনের দুই নম্বর প্লাটফর্মের একজন ব্যবসায়ী। গত কয়েক দিনে তার দোকানের প্রায় পাঁচ হাজার টাকার মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে।
তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, সামান্য ব্যবসা করেই সংসার চালাই। গত ৯ দিন ধরে ব্যবসা বন্ধ। এখন পরিবার নিয়ে খেয়েপরে বাঁচাই মুশকিল হয়ে পড়েছে। আমার মত আরও অনেকের একই অবস্থা। তারাও এখন আমার মতো কর্মহীন।
সরেজমিনে দেখা যায়, স্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনে ভিড় করে শুয়ে আছেন একদল যাযাবর মানুষ। এদের কেউ শুয়ে আছেন, আবার কেউ বসে আছেন আপন মনে। যেন টিকিট কাউন্টারটাই তাদের চিরচেনা বাড়িঘর। তবে স্টেশনের ভেতরের প্লাটফর্মে বসে আছেন কয়েকজন পুলিশ ও নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য। অলস সময় পার করছেন কয়েকজন স্টেশন ব্যবসায়ী। এর বাইরে স্টেশনের চারপাশে বইছে সুনশান নিরবতা।
একই অবস্থা স্টেশন এলাকার বাইরের হোটেল, রেস্তোরাঁ ও চা দোকানগুলোর। যেন কোথাও কেউ নেই। এরই মাঝে গরমে অতিষ্ঠ কর্মহীন শ্রমজীবীদের দেখা গেছে টং দোকানের মাচায় এবং ছায়ায় বসে পার করছেন অলস সময়।
এসময় কর্মহীন শ্রমজীবীরা জানান, ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার কারণে স্টেশনে যাত্রীদের আনাগোনা নেই। এ কারণে স্টেশন কেন্দ্রিক গড়ে ওঠা খাবার হোটেল, ভ্রাম্যমাণ দোকানদারসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রায় কয়েক শত ব্যবসায়ী কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। সেইসঙ্গে স্টেশনের কুলি, পানি বিক্রেতারাও পড়েছেন বিপাকে। এদের এখন সংসার নিয়ে বেঁচে থাকাই দায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্টেশন প্লাটফর্মের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা রেলওয়ে পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) একরামুল হক বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। কবে ট্রেন চলাচল চালু হবে, তা আমাদের জানা নেই। এটা সরকারের বিষয়। তবে আমরা স্টেশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সতর্ক দৃষ্টি রেখে দায়িত্ব পালন করছি।
তিনি আরও জানান, আগে স্টেশনের পথশিশু ও মানসিক ভারসাম্যহীনদের জন্য বাইরে থেকে খাবার দিয়ে যেত অনেক মানবিক মানুষ। কিন্তু এখন স্টেশন বন্ধ থাকায় কেউ তাদের জন্য খাবার নিয়ে আসে না।
রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর হাবিলদার মো. আব্দুল মালেক ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্তমানে ময়মনসিংহ স্টেশনে ১০টি ট্রেন আটকা আছে। এর মধ্যে রয়েছে বিজয় এক্সপ্রেস, জামালপুর এক্সপ্রেস, অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস, বলাকা কমিউটার, মহুয়া কমিউটার, নাসিরাবাদ এক্সপ্রেস, মোহনগঞ্জ লোকাল, জারিয়া লোকাল, ভাওয়াল এক্সপ্রেস এবং ধলেশ্বরী এক্সপ্রেস। এসব ট্রেন ঢাকা-ময়মনসিংহসহ মোট ৬টি রুটে চলাচল করে।
এবিষয়ে ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশন সুপারিটেনডেন্ট মো. নাজমুল হক বলেন, গত ১৯ জুলাই থেকে ময়মনসিংহ স্টেশনে ১০টি ট্রেন আটকা পড়ে আছে। তবে কবে নাগাদ ট্রেন চলাচল শুরু হবে তা আমার জানা নেই।
পিএইচ