পলিথিন কিনতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান আবু ছায়েদ
দোকানের পলিথিন কিনতে বাইরে বের হয়ে গুলিবিদ্ধ হন আবু ছায়েদ (৪৫)। গত ১৯ জুলাই (শুক্রবার) জুমার নামাজের পর ঢাকার মোহাম্মদপুরের বছিলায় কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় গুলিতে প্রাণ হারান তিনি।
আবু ছায়েদ পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের প্রধানহাট গ্রামের বাসিন্দা। তার এমন মৃত্যুতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তার স্ত্রী-সন্তানরা। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন আবু ছায়েদ।
বিজ্ঞাপন
পরিবার সূত্রে জানা যায়, আবু ছায়েদ ১০-১২ বছর ধরে ঢাকায় বাস করছিলেন। সেখানে তিনি প্রথমে রিকশা চালান। এর মধ্যে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করে ঢাকাতেই বসবাস করছিলেন। দুই বছর আগে মোহাম্মদপুরের বছিলা ৪০ ফিট এলাকায় ভাড়া নিয়ে একটি মুদি দোকান দেন তিনি। পঞ্চগড়ের গ্রামের বাড়িতে স্ত্রী মাজেদা বেগম, মেয়ে শাহনাজ আক্তার ও ছেলে মামুন ইসলাম থাকছেন। এদের মধ্যে শাহনাজ আক্তারের বিয়ে হয়ে গেছে, আর মামুন চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। ঢাকা থেকে আবু ছায়েদের পাঠানো টাকায় কোনোরকমে সংসার চালাচ্ছিলেন স্ত্রী মাজেদা বেগম।
জানা যায়, ১৯ জুলাই জুমার নামাজের পর দোকানের জন্য পলিথিন ব্যাগ আনতে সড়কে বের হয়ে সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন আবু ছায়েদ। ওই সময় মাথায় গুলি লাগলে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি। কিছুক্ষণ সড়কে পড়ে থাকে প্রাণহীন রক্তাক্ত দেহ। গোলযোগের মধ্যেই তার দ্বিতীয় স্ত্রী আছিয়া অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে মরদেহটি পঞ্চগড়ে আনার পরদিন শনিবার (২০ জুলাই) সকালেই বাড়ির পাশে আবু ছায়েদকে দাফন করা হয়।
আরও পড়ুন
নিহত আবু ছায়েদের ছেলে মামুন ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, দোকানে পলিথিন ব্যাগ শেষ হয়ে যাওয়ায় পলিথিন আনতে বের হয়ে গুলিতে নিহত হন বাবা। গুলিটি বাবার মাথার এক পাশ দিয়ে ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেছে। বাড়ির ভিটেমাটিই সম্পদ। আর কোনো সম্পদ নেই। তার মধ্যে এই জমির দলিল দিয়ে বাবা কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নিয়েছিলেন। তা জানতাম না। এখন শুনি সুদে-আসলে ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। কীভাবে চলব জানি না। তার ওপর এই ঋণের বোঝা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছি সবাই।
নিহত আবু ছায়েদের স্ত্রী মাজেদা বেগম বলেন, মানুষটা (আবু ছায়েদ) তো কোনো দল করতো না। ঢাকায় কোটা আন্দোলনের সংঘর্ষের সময় দোকানের জন্য পলিথিন ব্যাগ আনতে সড়কে বের হলেই মাথায় গুলি লেগে সড়কেই মারা গেল। বিনা কারণে নিরাপরাধ মানুষটি মারা গেল। তার উপার্জনের টাকা দিয়েই সংসারটা চলত। ঢাকা থেকে যে টাকা পাঠাত সেই টাকা দিয়েই কোনোভাবে সংসারটা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। ছেলের লেখাপড়াও চলত সেই টাকায়। এখন কী হবে, কীভাবে চলব?
নিহত পরিবারটি কঠিন দারিদ্রতায় জীবনযাপন করছে। সম্পদ শুধু ভিটেমাটি। তার মধ্যে মাটির দেয়াল আর জোড়াতালির টিনের ছাউনির ঘর। দুটি কক্ষে তাদের অভাবের সংসার। এর মধ্যে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। পরিবারটির পাশে সহযোগিতা করার আহ্বান প্রতিবেশীদের।
মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু আনছার মো. রেজাউল করিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, পরিবারটিকে ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতা করেছি। যেভাবে সহযোগিতা করা প্রয়োজন চেষ্টা চালাচ্ছি।
বোদা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘটনাটি ঢাকায়। জেনেছি আবু ছায়েদ ঢাকায় দোকান করতেন। পলিথিন আনতে বের হয়ে গুলিতে মারা গেছেন।
বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহরিয়ার নজির বলেন, চলমান আন্দোলন সহিংসতায় ওই ব্যক্তি নিহত হওয়ার খবর পেয়েছি। এখন পর্যন্ত পরিবারটি সহযোগিতার জন্য আবেদন করেনি। তবে ওই ব্যক্তির বিষয়ে খোঁজখবর নিতে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা চেয়ারম্যানের মাধ্যমে আবেদন করলে আমরা সেই তথ্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাব।
এসকে দোয়েল/এমজেইউ