চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সারা দেশে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। দেশের এমন পরিস্থিতিতে গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর পর্যটকশূন্য। আর এতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন হাওরে পর্যটক পরিবহনে থাকা হাউসবোট মালিক ও শ্রমিকরা। 

তারা বলছেন, এই কয়েকদিন পর্যটকদের নিয়ে কোনো নৌকা বা হাউসবোট হাওরে যেতে পারেনি।  টানা তিনবারের বন্যা, নিষেধাজ্ঞা, কোটা সংস্কার আন্দোলন, সব মিলিয়ে এবার টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটক নেই বললেই চলে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলেও হাওরে পর্যটক আসতে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে।

বর্ষা মৌসুমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা পর্যটকদের নিয়ে হাউসবোটগুলো সুনামগঞ্জ পৌর শহরের সুরমা নদীর সাহেববাড়ি ও ওয়েজখালী ঘাট এবং তাহিরপুর ঘাট থেকে টাঙ্গুয়ার হাওরে যায়। এরপর হাওর ও আশপাশের শহীদ সিরাজ লেক, লাকমা ছড়া, বারেকটিলা, শিমুল বাগান ও যাদুকাটা নদী ঘুরে দেখেন তারা। দুই দিনের ভ্রমণ শেষে আবার এই ঘাটেই পর্যটকদের নামিয়ে দেওয়া হয়। 

শুক্রবার (২৬ জুলাই) সকালে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের সুরমা নদীর সাহেববাড়ি ঘাটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সারি করে রাখা হাউসবোট ঘাটে পড়ে আছে। এসব হাউজবোটেই পর্যটকরা হাওরে যান, ঘুরে বেড়ান এবং রাতযাপন করেন। হাউজবোটের ভেতর আলাদা কেবিন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রসহ আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। কিন্তু কোনো পর্যটক আসতে না পারায় বোটের ভেতর কর্মীরা অলস সময় পার করছেন। প্রতিটি বোটে ব্যবস্থাপক, মাঝি, পাচকসহ চার থেকে ছয় কর্মী থাকেন।

সুনামগঞ্জে ‘বজরা’ নামের হাউজবোটের দায়িত্বে আছেন অমিত রায়। তিনি ঢাকা পোস্টকে জানান, তাদের ছয়টি হাউসবোট আছে। এবার হাওরে পর্যটক আসার মৌসুম শুরুর সময়েই বন্যার কারণে কয়েকদিন বোট বন্ধ রাখতে হয়েছে। হাওরে শুক্র ও শনিবার পর্যটক আসেন বেশি। এমনিতে পুরো মাসেই অনেকের বুকিং থাকে। কিন্তু এবার গত বুধবার থেকেই দেশের পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার খবরে অনেক পর্যটক তাদের বুকিং বাতিল করেন। এরপর পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ায় শুক্রবার কোনো বোট হাওরে যায়নি। যারা শুক্রবার সকালে সুনামগঞ্জ এসেছিলেন, দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় তাদের অনেককে আবার ফেরত পাঠানো হয়েছে।

একই বোটে থাকা মাঝি আব্দুল ঢাকা পোস্টকে জানান, প্রতিবার ভ্রমণে পর্যটকদের থাকা, খাওয়াসহ আমাদের নৌকা ১ লাখ ৪০ হাজার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ভাড়া যায়। গত এক সপ্তাহ ধরে ট্রিপ বন্ধ। এসময় আমাদের প্রায় ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

‘দি আর্ক’ বোটের ব্যবস্থাপক অন্তর ঢাকা পোস্টকে জানান,  আমাদের এই সময়ে সপ্তাহের ৭ দিনই ট্রিপ থাকে। কিন্তু চলমান অস্থিরতার কারণে আমরা ঘাট থেকে নৌকা ভাসাতেই পারছি না। হাউজবোটে যারা কাজ করেন, তরা ট্রিপ হলে ভাতা পান। ট্রিপ না হলে পান না। তাই মালিকদের সঙ্গে শ্রমিকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। 

ঘাটে ‘অভিযাত্রী’ নামের চারটি হাউসবোট বাঁধা ছিল। এর ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম ঢাকা পোস্টকে জানান, এক সপ্তাহে তিনটি ট্রিপ ছিল। সব বাতিল করতে হয়েছে। শুক্র ও শনিবারও ট্রিপ ছিল। কিন্তু পর্যটক আসতে পারছে না।  তাই অলস সময় কাটাচ্ছি। এ কদিনে আমাদের চার নৌকায় অন্তত ১২ লাখ টাকার ক্ষতি হল।

টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটক বহনকারী হাউসবোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক আতাউর রহমান ঢাকা পোস্টকে জানান, টাঙ্গুয়ার হাওরে ছোট-বড় দুই থেকে তিনশো নৌকা আছে। এর মধ্যে শতাধিক আছে হাউসবোট। একেকটি হাউসবোট তৈরিতে ৪০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। দেশের চলমান পরিস্থিতির কারণে এসব হাউসবোট পর্যটক নিয়ে হাওরে যেতে পারেনি। পর্যটকেরা সুনামগঞ্জে আসতে পারেননি। এতে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তার আশা, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার পর্যটকে মুখর হবে হাওর। ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবেন তারা।

রায়হান আলীম তামিম/পিএইচ