রাজশাহীর পদ্মা নদীতে অবাধে চলেছে নিষিদ্ধ চায়না দুয়ার জালে মাছ শিকার। এতে করে ছোট-বড় মাছের সঙ্গে জালে আটকা পড়ছে মা মাছসহ পোনাও। শুধু চায়না দুয়ার জালই নয়, নদীতে মাছ শিকার করা হচ্ছে নিষিদ্ধ নাইলন ও কারেন্ট জালে। অল্প খরচে অধিক মাছের আশায় এক শ্রেণির জেলেরা এই জাল দিয়ে নদীতে মাছ শিকার করছেন।

তবে এসব জালে মাছ শিকারের বিপক্ষে অন্য জেলেরা। তারা বলছেন, নিষিদ্ধ এই জালে মাছ শিকারের ফলে মৎস্য সম্পদ এক প্রকারের হুমকির মুখে পড়ছে। তাই চায়না দুয়ার, লাইলন জাল ও কারেন্ট জাল বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।

পবা উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন, ‘জনবল সংকটের কারণে তারা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতে পারেন না।’

পবা হরিয়ান ইউনিয়নের নয় নম্বর ওয়ার্ডের মিজানের মোড় এলাকায় পদ্মা নদীতে নিষিদ্ধ চায়না দুয়ার জালে বেশ কয়েকজনকে মাছ শিকার করতে দেখা গেছে।

তাদের মধ্যে মুক্তার আলী জানান, ‘এই চায়না দুয়ার জালে সব ধরনের মাছ ধরা পড়ে। অল্প পানিতে এই জাল পেতে রাখলে মাছের সঙ্গে সাপ পড়ে। তাই গভীর নদীতে পেতে রাখা হয় এই জাল। প্রতিদিন বিকেলে পেতে পরের দিন সকালে এই জাল তুলে নেওয়া হয়। তাতে একেকটি জালে দেড় থেকে দুই কেজি বিভিন্ন মাছ পড়ে।’ তবে মুক্তার আলী জানান, তিনি নদীতে পাঁচটি চায়না দুয়ার জাল পেতেছেন।

তিনি জানান, এই জাল রাজশাহীতে পাওয়া যায় না। তবে এই জালে ধরা পড়া মাছ রাজশাহীর বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হয়। এই জাল কুষ্টিয়া থেকে কিনে আনা হয়েছে। সেখানে একেকটি জালের দাম পড়েছে ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। পবার মিজানের মোড় ঘাট থেকে শুরু করে চারঘাট পর্যন্ত এই জালে দুই শতাধিক জেলে মাছ শিকার করে।

অপর মাছ শিকারি বলেন, ‘কারেন্ট জালে একটা নির্দিষ্ট আকারের মাছ ধরা পড়ে। বাকি ছোট-বড় মাছ জালে ধরা পড়ে না। কারেন্ট জালে পোনা মাছ নষ্ট হয় না। কারেন্ট জালে নদীতে থাকা সাপ কম মারা পড়ে। কিন্তু চায়না দুয়ার জালে সব ধরা পড়ে। এই জালে মাছের পোনা থেকে শুরু করে সবধরনের মাছ আটকা পড়ে। শুরু মাছই নয়, মাছের পোনা, সাপ, ব্যাঙ, কাঁকড়া ধরা পড়ে এই জালে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জেলে বলেন, চায়না দুয়ার জাল নিষিদ্ধ। তারপরও অনেকেই মাছ শিকার করে। মৎস্য অফিস অভিযান চালালে মাছ শিকার দুই থেকে তিন দিনের জন্য বন্ধ থাকে। তারপরে আবার মাছ শিকার শুরু হয়। এই জালে মাছ শিকারের ফলে মৎস্য সম্পদ এক প্রকারের হুমকির মুখে পড়ছে। তাই চায়না দুয়ার, নাইলন জাল ও কারেন্ট জাল বন্ধে সংশ্লিষ্টদের কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।

জনবল সঙ্কটের কারণে নিয়মিত অভিযান চালানো সম্ভব হয় না উল্লেখ করে পবা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, চায়না দুয়ার অবৈধ ও নিষিদ্ধ জাল। এই জালে পোনা মাছ ছাড়াও সাপ, ব্যাঙ, কাঁকড়া ধরা পড়ে। এই জালে মাছ শিকার বন্ধে প্রতিমাসে তিন থেকে চারদিন অভিযান পরিচালনা করা হয়। একেক বার অভিযানে তারা ৩০ থেকে ৪০টা করে চায়না দুয়ার জাল উদ্ধার করে বলে জানান।

এসএম