১৯৬৯ সালে নির্মাণ করা হয়েছে বরগুনা জেলা কারাগার। তবে প্রতিষ্ঠার ৫৫ বছরেও বিশেষ কোনো সংস্কার না হওয়ায় যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে কারাগারটি। এতে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন কারাবন্দি ও দায়িত্বরত কারারক্ষীরা। 

কারাগারের ভেতরে বন্দিদের ও বাইরে কারারক্ষীদের থাকার পুরাতন ঘরগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এছাড়া কারাগারের চারিদিকে নিচু পেরিমিটার ওয়াল ও বাউন্ডারি ওয়াল না থাকায় কারাবন্দিদের পালিয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে সব সময়। 

কারাগারের এমন বেহাল অবস্থা থাকলেও বিধি-নিষেধের কারণে কথা বলতে রাজি হননি কারা কর্তৃপক্ষ। তবে জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন সব সমস্যা সমাধান এবং কারাগার সম্প্রসারণ ও ভবন নির্মাণের জন্য প্রচেষ্টা চলছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বরগুনা জেলা কারাগারটি নির্মাণের পর ১৯৬৯ সালে চালু করা হয়। পরবর্তীতে দীর্ঘ ৫৫ বছরে রাস্তাঘাটসহ কিছু অবকাঠামো নির্মাণ করা হলেও কারাগারের ভেতর ও বাইরের অনেকগুলো ভবনে কোনো সংস্কার করা হয়নি। বিশেষ করে কারাবন্দিদের চিকিৎসার জন্য কারা হাসপাতালসহ অত্যাধিক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে বন্দিদের থাকার বিষখালী এবং পায়রা নামের দুইটি ভবন। এছাড়া বেহাল অবস্থা তৈরি হয়েছে কারাগারের কিশোর ওয়ার্ডটিও।

সরেজমিনে কারাগারের বাইরের বিভিন্ন ভবন ঘুরে দেখা যায়, কারারক্ষীদের থাকার জন্য নির্মিত ভবনগুলো মধ্যে অনেক ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দিয়ে বেরিয়ে গেছে ভেতরের রড। খসে পড়েছে অধিকাংশ ভবনের বিভিন্ন জায়গার পলেস্তারা। ব্যবহার অনুপযোগী হলেও এসব ভবনে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন কারারক্ষীরা। এছাড়া কারাবন্দীদের সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাতের ঘরটিরও রয়েছে বেহাল অবস্থা। বিভিন্ন স্থানে ছাঁদের নিচ থেকে ফাটল ধরে বের হয়ে গেছে রড। যে কোনো সময় পলেস্তারা খসে পড়ে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।

সম্প্রতি বরগুনা কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া মো. জাহিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, কারাগারের হাসপাতাল, পায়রা নামের একটি ভবন, রান্নাঘরসহ বেশ কয়েকটি ভবন খুব ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যদি কোনো সময় ছোট-বড় ভূমিকম্প হয় ভবনগুলো ধসে পড়তে পারে। এছাড়া বেশি মানুষ একত্রে হাটলেও মনে হয় ভবনগুলো কাঁপছে। যদি কোনো কারণে ভবনগুলো ধসে পড়ে যায় তাহলে শতাধিক মানুষের হতাহতের শঙ্কা রয়েছে। 

সোহাগ নামের আরেকজন ঢাকা পোস্টকে বলেন, কারাগারের কিশোর ওয়ার্ডটির ছাউনি টিন দিয়ে তৈরি। টিনগুলো পুরাতন হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টি হলেই বিভিন্ন স্থান থেকে পানি পড়ে। এছাড়া কারাগারের মধ্যে হাসপাতালের ছাদটি ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় যে কোনো সময় ধসে পড়ার ঘটনা ঘটতে পারে।

মো. হান্নান মিয়া নামের এক কারাবন্দির স্বজন ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেখা করতে এসে দেখলাম ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল। খসে পড়ার মতো অবস্থায় রয়েছে ছাদের পলেস্তারা। ভবনগুলো দ্রুত সংস্কারের প্রয়োজন। 

বরগুনা জেলা কারাগারের বেসরকারি কারা পরিদর্শক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মোতালেব মৃধা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বরগুনা কারাগারে ধারণ ক্ষমতার প্রায় তিনগুণ বন্দি রয়েছে। ভেতরে যে ভবনগুলো রয়েছে তার মধ্যে অনেক ভবনই এখন ঝুঁকিপূর্ণ, রাস্তার অবকাঠামো দুর্বল। এছাড়া পুরাতন ডিজাইনে তৈরি পেরিমিটার ওয়ালের উচ্চতা খুবই কম থাকায় যে কোনো সময় বন্দিরা কারাগার থেকে পালিয়ে যেতে পারে। এ কারণে যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে দ্রুত সময়ের মধ্যে কারাগারের ওয়ালসহ ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংস্কার প্রয়োজন। 

এ বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসক রফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বরগুনা জেলা কারাগারটি প্রায় ৫০ বছরেরও অধিক সময় আগে নির্মিত হয়েছে। কারাগার সম্প্রসারণের প্রক্রিয়া হিসেবে আমরা অতিরিক্ত জায়গা বরাদ্দের বিষয়ে কাজ করছি। গণপূর্তর মাধ্যমে যে জায়গা অধিগ্রহণ করা আছে তা যদি কারগারকে হস্তান্তর করতে পারি তাহলে ওই জায়গায় কারাগার সম্প্রসারণের কাজ শুরু করা যাবে। এছাড়া কারাগারের যেসব ভবন ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে তার মধ্যে কোথাও সংস্কার, আবারা কোথাও ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করা প্রয়োজন। এ বিষয়গুলো আমরা সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব যাতে নতুন করে ভবন নির্মাণসহ সব সমস্যার সমাধান করতে পারি। 

আব্দুল আলীম/আরকে