পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেছেন, সরকারবিরোধী দুটি রাজনৈতিক দল সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে কোটা আন্দোলনে। এর সঙ্গে জেলা পুলিশের উদ্যোগে রাস্তাগুলোকে মানুষের চলাচলের জন্য স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তুলতে পুলিশ হকার উচ্ছেদ করেছিল। সেই হকাররাও নৈরাজ্যকর অবস্থা সৃষ্টি করার জন্য ভাঙচুর ও জ্বালাও-পোড়াও কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছে। এই সম্মিলিত গোষ্ঠীর মূলত উদ্দেশ্য ছিল রাষ্ট্রটাকে অকার্যকর করা ও সরকারকে উচ্ছেদ করা। অথাৎ তারা রাষ্ট্রদ্রোহীতার কাজটি করেছে। 

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) বিকেলে কোটা আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত সাভারের বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন শেষে সাভার মডেল থানা চত্বরে এক প্রেস বিফিংয়ে তিনি এসব বলেন।
 
সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, বিগত কয়েক দিন পূর্বে নৈরাজ্যকারী ও রাষ্ট্রদ্রোহীদের দ্বারা যে নৈরাজ তৈরি করা হয়েছিল, তা পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলাবাহিনী কাজ করে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। যে সকল নৈরাজ্যগুলো সৃষ্টি হয়েছে, তা পরিদর্শন করেছি। প্রায় ২০টির ওপরে প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও তছনছ করা হয়েছে। এর মধ্যে সাভারে পশু সম্পদ অফিসে ভাঙচুর ও তছনছ করা হয়েছে। সেখানে গাড়িতে আগুন দিয়ে পোড়ানো হয়েছে। সেখানে রাস্তার ওপরে পোড়ানো গাড়ির বীভৎস চিত্রগুলো আমরা দেখলাম। পুলিশের স্থাপনাগুলোর মধ্যে পুলিশ বক্স, ডিবি অফিস এবং ট্রাফিক পুলিশের যে স্থাপনাগুলো ছিল। সেগুলো একেবারে নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে। এছাড়াও সিটি সেন্টার ভাঙচুর ও মানুষের জানমাল এবং দোকান-পাটে আক্রমণ করা হয়েছে। প্রায় ৩-৪ হাজার লোক ৩ দিন ধরে নৈরাজ্য চালিয়েছিল। 

তিনি বলেন, প্রকৃত পক্ষে কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছিল শিক্ষার্থীদের। যারা নাশকাতাকারী, সরকার এবং রাষ্ট্রকে ভেনিশ করে দিতে চায়, রাষ্ট্রকে অচল করে দিতে চায়, তাদের দ্বারা কোটাবিরোধী আন্দোলনটা একে বারেই হাইজ্যাক হয়ে যায়। এই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য যারা অংশগ্রহণ করেছে, তাদের মধ্যে কেউ ছাত্র ছিল না।
 
ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনে যে ছাত্ররা ছিল, তারা এই ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ,  জ্বালাও-পোড়াওয়ে বাংলাদেশের কোথাও অংশগ্রহণ করেনি। আমাদের কাছে ভিডিও আছে। যারা করেছে, তারা হলো দুষ্কৃতকারী। তারা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে এবং সরকার পতনের মধ্য দিয়ে ফায়দা লুটতে চেয়েছিল। 

এ সময় সাভারে সহিংসতায় ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ডিআইজি বলেন, সাভারে আমরা দেখলাম অনেকগুলো জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক ভাঙচুর-লুটপাট হয়েছে। পশু সম্পদ অফিসে সকল রুম তছনছ করা হয়েছে এবং এসিগুলো পর্যন্ত খুলে নিয়ে লুটপাট করা হয়েছে। টয়লেটের যে কমোড আছে, সেগুলো খুলে নিয়ে লুট করেছে। তার মানে সহিংসতায় শুধুমাত্র  ভাঙচুরকারীরা না,  লুটপাটকারীরাও অংশগ্রহণ করেছে। যাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল লুটপাট করা। 

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করার জন্য ভাঙচুর ও জ্বালাও -পোড়াও করেছে, আমরা ভিডিও ফুটেজ দেখে এবং নানা ধরনের চাক্ষুষ সাক্ষীর সাক্ষ্য নেব, ভার্চ্যুয়াল মিডিয়াতে যোগাযোগের যে মাধ্যম আছে, তা দেখে আমরা তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। একই সঙ্গে সহিংসতাকারীদের সঙ্গে জড়িত সকলকেই আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করাব। 

সাভারে হকারদের জ্বালাও -পোড়াও কর্মকাণ্ডের বিষয়ে ডিআইজি বলেন, হকাররা কোন দলের এবং কে কোন পারপাস সার্ভ করেছে, তা আমরা দেখব না। যারা অপরাধ করেছে, আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং তা তদন্তের মাধ্যমে উঠে আসবে। 

এ সময় পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মারুফ হোসেন সরদার, ঢাকা জেলা উত্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) আব্দুল্লাহিল কাফী, সাভার সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার শাহিদুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 

আরএআর