ছয় দিনে যেমন ছিল ফেনীর চিত্র
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কমপ্লিট শাটডাউন, কারফিউ ও সাধারণ ছুটিসহ নানা ঘটনায় সরব ছিল ফেনীর জনপদ। সারাদেশের ন্যায় ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় এ জেলা শহরেও প্রভাব পড়ে দৈনন্দিন কর্মব্যস্ততায়। এ নিয়ে গত ১৯ জুলাই থেকে বুধবার (২৪ জুলাই) পর্যন্ত ফেনীর ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য।
২৪ জুলাই, বুধবার
বিজ্ঞাপন
জেলায় সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিলের সিদ্ধান্তে জনজীবনে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। কয়েকদিনের স্থবিরতার পর দোকানপাট খুলেছে ব্যবসায়ীরা। অন্যান্য দিনের তুলনায় বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সড়কে মানুষজনের উপস্থিতিও বাড়তে থাকে।
দুপুর ২টার দিকে শহরের বড় বাজার ও পৌর হকার্স মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, গত কয়েকদিনের তুলনায় বাজারে পণ্য সামগ্রীর যোগান বেড়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে ক্রেতা উপস্থিতিও বাড়ছে। এছাড়া নিত্যপণ্যের বাজারদরও গত কয়েকদিনের তুলনায় কম রয়েছে। তবে বিকেল থেকে সড়কে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি কমতে দেখা গেছে। এছাড়া শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সরব উপস্থিতি রয়েছে।
২৩ জুলাই, মঙ্গলবার
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সারা দেশের ন্যায় ফেনীতেও বন্ধ ছিল ইন্টারনেট সেবা। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন বিভিন্ন পর্যায়ের সেবাপ্রার্থীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় শহরের এটিএম বুথ, মোবাইল ব্যাংকিংসহ সংশ্লিষ্ট সেবা গ্রহীতারা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। এছাড়া স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটারে রিচার্জ করতে না পারায় শহরের শহীদ শহিদুল্লাহ কায়সার সড়কের পল্লী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কার্যালয়ে মানুষজনের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে।
২২ জুলাই, সোমবার
এদিন কারফিউতে ফাঁকা ছিল শহর। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও বন্ধ ছিল যানচলাচল। তবে জেলার বিভিন্ন উপজেলাগামী সড়কগুলোতে কিছু ছোট যানচলাচল করতে দেখা গেছে।
শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সরব উপস্থিতি থাকলেও আন্দোলনকারীদের মাঠে দেখা যায়নি। সন্ধ্যার দিকে শহরের ট্রাংক রোড এলাকা থেকে সোনাগাজী উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও মতিগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আমিন উদ্দিন দোলনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
২১ জুলাই, রোববার
এদিন কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে কালো ব্যাজ ধারণ করে শোক জানিয়েছেন ফেনী জেলা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। বিকেল ৫টার দিকে শহরের তাকিয়া রোডে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সালাউদ্দিন মামুন এবং সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ আলম মিলনের নেতৃত্বে একটি মিছিল করা হয়। এ সময় সরকার বিরোধী নানা স্লোগান দেন নেতাকর্মীরা। এদিন রাতে শহর জামায়াতের আমির মোহাম্মদ ইলিয়াসকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
২০ জুলাই, শনিবার
এদিন বিকেলের দিকে শহরের তাকিয়া রোড এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন পুলিশ। এ সময় পুলিশকে উদ্দেশ্য করে আন্দোলনকারীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন।
সকালের দিকে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত বিশেষ আইনশৃঙ্খলা সভা শেষে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সদস্যদের নিয়ে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে মহড়া দেন জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার।
১৯ জুলাই, শুক্রবার
ফেনীতে এর আগে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ মিছিলে হামলা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। দুপুর ২টার দিকে শহরের বড় মসজিদ এলাকায় বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা পুলিশের মুখোমুখি অবস্থান নেন। পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে তারা সড়ক থেকে সরে যান। এদিন বিকেলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা একটি মিছিল নিয়ে বড় মসজিদ এলাকায় গেলে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
তারেক চৌধুরী/আরকে