লক্ষ্মীপুরে পূর্ণিমার প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে মেঘনা নদীর উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৭ ফুট বেশি জোয়ারে নদী থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে লোকালয় পর্যন্ত পানিতে তলিয়ে গেছে।

গতকাল বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকতে শুরু করে। রাত ৮টার দিকে ভাটায় নামতে শুরু করে পানি। কমলনগর উপজেলার চরমার্টিন, বলিরপোল, মতিরহাট, কালকিনি ও কালভার্ট এলাকায় খোঁজ নিয়ে জোয়ারের বিষয়টি জানা গেছে। একইভাবে সোমবার (২২ জুলাই) ও মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নদী সংলগ্ন রামগতি, কমলনগর ও রায়পুর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়। লোকালয়েও জোয়ারের পানিতে তীব্র স্রোত দেখা যায়। এতে রাস্তাঘাট, বসতবাড়ি, ফসলি জমি ও কাঁচাপাঁকা নিচু ঘর, ভিটি পানিতে ডুবে যায়।

এদিকে টানা তিনদিন জোয়ারে উপকূল প্লাবিত হয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির মধ্যেও পড়তে হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। এ জোয়ারে ক্ষেতের বীজতলা নষ্টসহ ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। হাঁস-মুরগিসহ গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়েছে এলাকাবাসীর।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ধীর গতিতে মেঘনা নদীর তীর রক্ষাবাঁধ কাজ চলছে। তিন বছর শেষ হতে চললেও বাঁধের দৃশ্যমান কিছু দেখা যাচ্ছে না। এতে রামগতি-কমলনগরের প্রায় ৩৭ কিলোমিটার অরক্ষিত উপকূলীয় এলাকা প্রতিবছরই প্লাবিত হয়। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় রেমাল এ উপকূলে তাণ্ডব চালিয়ে গেছে। যার ক্ষতচিহ্ন এখনো উপকূলে দৃশ্যমান। এরমধ্যে পূর্ণিমার জোয়ারে প্লাবিত হয়ে ক্ষেতের বীজতলা নষ্ট, পুকুরে চাষের মাছ ভেসে গেছে। দ্রুত বাঁধ নির্মাণ হলে জোয়ারের পানি থেকে রক্ষা পেত উপকূলের বাসিন্দারা।

কমলনগরের চরমার্টিন এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধ জালাল আহমেদ, আব্দুজ জাহের, আবু তাহের বলেন, জোয়ারের পানিতে তাদের পুরো বাড়ি ডুবে ছিল। নিচু ভিটির ঘরের ভেতরে পানি ঢুকেছে। সবাইকে চকি-খাটে আশ্রয় নিতে হয়েছে। এলাকার রাস্তাঘাট পানির নিচে ছিল। ক্ষেতে অনেকেই আমনের বীজতলা তৈরি করেছে তা জোয়ারের পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। দিনে ও রাতে প্রতিদিন দুইবার জোয়ার ওঠে। রাতের বেলা জোয়ারে হাঁস-মুরগি ও গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। খাঁচার ভেতরে থাকা অনেকে মুরগি পানিতে ডুবে মারা গেছে।

চরকালকিনি ইউনিয়নের কালকিনি এলাকার গৃহবধূ মনতাজের নেছা বলেন, জোয়ারে পানি ঢুকে চুলা রান্নার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ঘরের ভেতর হাঁটু পরিমাণ পানি থাকে। সবাইকে নিয়ে খাটে বসে থাকতে হয়। ভয়ে রাতে ঘুম আসে না। 

কমলনগরের চরলরেন্স এলাকার স্কুল শিক্ষক সানা উল্লাহ সানু বলেন, নদীর স্বাভাবিক জোয়ার উপকূলে প্রবেশ করে না। স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৭ ফুট বেশি জোয়ার ছিল। এতে নদী থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার পূর্বে লোকালয় পর্যন্ত তীব্র স্রোত নিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকেছে। 

উল্লেখ্য, প্রতি বছর আগস্ট-সেপ্টেম্বরের দিকে এ উপকূলীয় এলাকায় জোয়ারের পানি ঢোকে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এ বছর অসময়ে (আগাম) জোয়ারের পানিতে উপকূল প্লাবিত হয়েছে।

হাসান মাহমুদ শাকিল/এমএ