শালিস বৈঠকে বিচার প্রার্থী প্রতিমা রানী নামে এক গৃহবধূকে গলা ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন বাচ্চুর বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) রাতে হাতীবান্ধা উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসায় শালিস বৈঠকে উপস্থিত জনতা ও গৃহবধূর সন্তানদের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী গৃহবধূ প্রতিমা রানী উপজেলার ভেলাগুড়ি ইউনিয়নের মধ্যকদমা খামার পাড়া গ্রামের উজ্জল চন্দ্রের দ্বিতীয় স্ত্রী এবং একই গ্রামের নরেন্দ্র নাথের মেয়ে।

ভুক্তভোগী গৃহবধু ও স্থানীয়রা জানান,  প্রতিবেশী সচিন চন্দ্রের ছেলে দুই সন্তানের জনক উজ্জল চন্দ্রের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে স্বামী পরিত্যাক্তা দুই সন্তানের জননী প্রতিমা রানীর। গত মাসে প্রেমের টানে বাড়ি ছাড়েন উজ্জল ও প্রতিমা রানী। সেখানে রেজিস্ট্রিমূলে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তারা। বিয়ে মেনে নেওয়ার অজুহাতে উজ্জলের পরিবার তাদেরকে বাড়িতে ফেরান।

মঙ্গলবার রাতে তারা বাড়ি ফিরলে তাদেরকে নেওয়া হয় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লিয়াকত হোসেন বাচ্চুর বাড়িতে। সেখানে উভয় পক্ষ ও স্থানীয়দের নিয়ে আপস মীমাংসার বৈঠকে বসেন চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন বাচ্চু। প্রথম দিকে তাদের বিবাহ  বিচ্ছেদের চেষ্টা করেন মাতব্বররা। সেখানে ব্যর্থ হলে তাদের বিবাহের সকল প্রমাণপত্র কেড়ে নেওয়া হয়। সংসার টিকাতে মাতব্বরদের হাতে পায়ে ধরেও মন গলাতে পারেনি গৃহবধূ প্রতিমা রানী। বৈঠকের সিদ্ধান্ত বিবাহ বিচ্ছেদ মেনে না নেওয়ায় প্রতিমা রানীকে তার সন্তানদের সামনে গলা ধাক্কা দিয়ে বাসার মেঝেতে ফেলে দেন উপজেলা চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন বাচ্চু।

চেয়ারম্যানের এমন আচরণে বৈঠকে থাকা উপস্থিত জনতা হতভম্ব হয়ে পড়েন। প্রতিমা রানীর সন্তানদের আর্তনাদে কান্নার রোল পড়ে যায় চেয়ারম্যান বাড়িতে। এতেও ক্ষান্ত হননি চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন বাচ্চু। অবশেষে গৃহবধূর বিয়ের কাগজপত্র লোপাট করে তাকে জোরপূর্বক গাড়িতে তুলে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। পরে গৃহবধূ রাত ৪টার দিকে স্বামী উজ্জল চন্দ্রের বাড়িতে ওঠেন। সেখানেও তাকে মেনে নিতে অপরগতা প্রকাশ করেন তার শ্বশুর সচিন ও উজ্জলের প্রথম স্ত্রী শিউলী রানী। স্ত্রীর দাবিতে উজ্জলের বাড়িতেই অবস্থান করছেন গৃহবধূ প্রতিমা রানী।

প্রতিমা রানী বলেন, আমাদের বিয়ে বিচ্ছেদ করাতে জোর করা হয় বৈঠকে। আমি রাজি না হওয়ায় বাচ্চু চেয়ারম্যান আমাদের বিয়ের কাগজপত্র ছিঁড়ে ফেলে আমাকে গলা ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে দেন। আমার স্বামী উজ্জল এর প্রতিবাদ করায় তাকেও মারপিট করেন আমার মামা শ্বশুর। বিয়ে করা আমাদের অপরাধ। আমাকে নষ্টা মেয়ে বলে বাজে গালিগালাজও করেন চেয়ারম্যান। শ্বশুরের মোটা অংকের টাকার জোরে আমার ওপর অবিচার করা হয়েছে। আমি ন্যায়বিচার চাই।

ভুক্তভোগী গৃহবধূর ছেলে পল্লল রায় ও পরিতষ বলেন, আমাদের সামনে আমাদের মাকে কয়েকবার গলা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছেন বাচ্চু চেয়ারম্যান। আমরা হাতে পায়ে ধরেও রক্ষা করতে পারি নি। আমরা এর বিচার চাই।

বৈঠকে উপস্থিত থাকা স্থানীয় ভেলাগুড়ি  বোডের হাট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ইবনে ওহাব আল মাহমুদ মুরাদ বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে তার বাসায় শালিস বৈঠক হয়। তবে বিষয়টি আপস করে দিয়েছিলেন চেয়ারম্যান। তবুও প্রতিমা কেন তার স্বামীর বাড়িতে পুনরায় অবস্থান নিল তা জানি না। গৃহবধূকে গলা ধাক্কা দেওয়ার বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

হাতীবান্ধা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসায় বৈঠকের বিষয়ে জানি না। তবে গৃহবধূকে গলা ধাক্কা দিয়ে থাকলে তা ঠিক করেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদের চেয়ারনম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লিয়াকত হোসেন বাচ্চু বলেন, প্রতিমা রানীর পূর্বের স্বামী তাকে ফেরত নিতে চাওয়ায় আমার বাসায় উভয় পক্ষই বৈঠকে বসেছিল। সেখানে দ্বিতীয় স্বামীকে ছেড়ে প্রথম স্বামীর ঘরে যাবে জন্য প্রতিমা রানীকে তার প্রথম স্বামীর কাছে পা ধরে  ক্ষমা চাইতে বলেছি। তাকে গলা ধাক্কা দেওয়ার অনেকেই ছিল। আমি চেয়ারম্যান কেন গলা ধাক্কা দেব? এটুকু না করলে তো শালিস বৈঠক করা যাবে না। আপনারা এভাবে লিখলে বিচার শালিস করা যাবে না তো।

নিয়াজ আহমেদ সিপন/আরএআর