কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে চলমান অস্থিরতার মধ্যে কারফিউ শিথিল করায় যান চলাচল স্বাভাবিক হলেও দ্রুতই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবেন না বরিশাল বিভাগের আন্তঃজেলা বাস মালিকরা। টানা পাঁচ দিন ধরে বন্ধ ছিল ছয় জেলার মালিক সমিতির অধীনে পরিচালিত ৯৯৩টি এবং বিআরটিসির ৫৫টি মিলিয়ে মোট ১০৪৮টি গাড়ি। এতে প্রায় পাঁচ কোটি টাকারও বেশি লোকসান হয়েছে।

বুধবার (২৪ জুলাই) দুপুরে মুঠোফোনে বাস মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে এ তথ্য জানা গেছে।

বরিশালের নথুল্লাবাদ ও রূপাতলী বাস মালিক সমিতির আওতায় ৩২০টি গাড়ি চলাচল করে। নথুল্লাবাদ বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দাস জানিয়েছেন, গত পাঁচ দিন গাড়ি টার্মিনালের মধ্যেই ছিল। কোনো গাড়ি বের করার সুযোগ ছিল না। গাড়ির কোনো ক্ষতি না হলেও গাড়ি চালাতে না পারায় ব্যবসার মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে।

রূপাতলী বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি সুলতান মাহমুদ বলেন, বাস না চলায় ব্যবসায়িক ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া স্টাফদের খরচ দিতে হয়েছে মালিকদেরই। এখন কারফিউ শিথিল হওয়ার সময় গাড়ি চলাচল করে। এখনো আমরা পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে পারিনি।

এই দুই মালিক সমিতি থেকে জানানো হয়েছে, এখন পর্যন্ত দেড় কোটি টাকারও বেশি লোকসান হয়েছে।

পিরোজপুর বাস মালিক সমিতির আওতায় ১৫০টি, ভোলা বাস মালিক সমিতির আওতায় ১৮৫টি, পটুয়াখালী বাস মালিক সমিতির আওতায় ১৪১টি, ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতির আওতায় ১০৬টি এবং বরগুনা বাস মালিক সমিতির আওতায় ৭০টি গাড়ি চলাচল করে।

পিরোজপুর বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রতন কুমার চক্রবর্তী বলেন, প্রতিটি গাড়িতে প্রতিদিন ৫-৬ হাজার টাকা আয় হয়। পাঁচ দিনে কোনো টাকার মুখ দেখেনি বাস শ্রমিক ও মালিকরা। উল্টো আমরা আতঙ্কে ছিলাম গাড়ি নিরাপদে রাখতে পারি কিনা এই নিয়ে।

ভোলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম বলেন, ভোলাতে সহিংস কোনো ঘটনা না ঘটলেও বাস মালিক সমিতি লোকসান গুনছে। এই কয়দিন কোনো আয় না হলেও শ্রমিকদের খরচ বহন করতে হয়েছে। ট্রিপ বন্ধ থাকায় প্রায় ২০ লাখের বেশি টাকা লোকসান হয়েছে আমাদের।

পটুয়াখালী জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির নির্বাহী সদস্য আশরাফ মিয়া বলেন, অস্থিরতা দেখেই আমরা নিরাপদে গাড়িগুলো টার্মিনালে রেখেছি। আসলে আমরা যে ক্ষতির মুখে আছি তা পুষিয়ে উঠতে সময় লাগবে। পাঁচ দিনে কমপক্ষে ৩০ লাখ টাকারও বেশি নগদ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতি থেকে জানানো হয়েছে, তাদেরও প্রায় ৩০/৩৫ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।

এদিকে এখনো যাত্রী পরিবহনে সবগুলো বাস সড়কে নামাতে পারেনি বিআরটিসি বরিশাল ডিপো। বিআরটিসি বরিশাল ডিপোর ব্যবস্থাপক জামিল হাসান জানিয়েছেন, বরিশাল ডিপোর অধীনে ৫৫টি গাড়ি চলাচল করে। গাড়িগুলোর মাধ্যমে প্রতিদিন ৮ লাখ ৮৬ হাজার টাকা আয় হতো। গত পাঁচ দিনে গাড়ি সড়কে নামাতে না পারায় প্রায় অর্ধকোটি টাকার কাছাকাছি ক্ষতি হয়েছে।

তিনি বলেন, বুধবার মাত্র ৩০টি গাড়ি সড়কে নামানো হয়েছে। কারফিউ শিথিল সময়ে তা চলবে। এছাড়া ডিপোতে থাকবে। 

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর